মো.জিহাদুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়ায় ঈদের দিনে(৩১মার্চ) বিকালে মুক্তিযোদ্ধা আকবর শেখ হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে শতাধিক ঘর-বাড়ি।
নগদ টাকা, স্বর্ণলংকার, গরুসহ কমপক্ষে ১০ কেটি টাকার সম্পদ লুটপাট হয়েছে বলে ভূক্তভোগীদের দাবী। ভূক্তভোগীদের অভিযোগ পুরুষশূন্য গ্রামে হত্যা কান্ডের পর থেকে পুলিশের উপস্থিতিতেই চলছে এসব আইন বর্র্হিভূত কর্মকান্ড। এসব ঘটনায় ঘরছাড়া হয়েছে কমপক্ষে ৫’শ মানুষ।
লাহুড়িয়া গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় বিলের মধ্যে সরেজমিন গিয়ে চোখে পড়লো একটি ফাঁকা বাড়ি। দুর থেকে মনে হবে কাঠের ফ্রেমে তৈরী হচ্ছে টিনের ঘর। কাছে যেতেই বোঝা গেলো নতুন একটি টিনের ঘরকে কুপিয়ে ছিন্ন-ভিন্ন করা হয়েছে। রাস্তার পাশে দাড়িয়ে অঝোরে কাঁদছেন দিনমজুর সুমন মোল্যার স্ত্রী রুনা খানম। রুনা খানমের বাড়িঘর লুটপাট হয়েছে শুক্রবার(৪ এপিল) জুম্মা নামাজের পর, এরপর ভাংচুর করেছে বাড়িঘর আসবাবপত্র। তারা এখন অন্যের বাড়িতে থাকছেন।
মালয়েশিয়া প্রবাসী আব্দুল্লাহ মুঠোফোনে জানান, আমার ১০ এপ্রিল ফ্লাইটে- দেশে যাওয়ার কথা ছিল। ভেবেছিলাম দেশে গিয়ে বিবাহের অনুষ্ঠান শেষ করবো। এখন আমার সব স্বপ্ন শেষ। বাবা-মার কি অবস্থা হবে তাই নিয়ে টেনশনে আছি। পুলিশ কারোর কোন সম্পদই রক্ষা করতে পারছে না তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কে দেবে ? দেশে আসলে আমিতো খুনই হয়ে যাবো। এভাবেই সাংবাদিকদের জানাচ্ছিলেন তাদের অসহায়ত্বের কথা।
লাহুড়িয়া পশ্চিমপাড়ার খলিল মোল্যার স্ত্রী খাদেজা বেগম বলেন, বাড়ি-ঘর ভাংচুর করেই প্রতিপক্ষ ক্ষান্ত হয়নি। ফলধরা লেবু আর আমগাছগুলো কেটে ফেলে প্রতিহিংসা মিটিয়েছে। যেন মহা কোন ঘূর্নিঝড় বয়ে গেছে এখানে। বাড়িতে রান্না করে খাওয়ার মতো একটি আসবাবপত্রও নাই ।
মুক্তিযোদ্ধা আকবার শেখের ভাতিজা শরিফুল ইসলাম বলেন, আমার চাচা অত্যন্ত সৎ মানুষ ছিলেন। তিনি সবসময়ই ঝামেলা এড়িয়ে চলতেন। ঈদের দিন পুলিশের কথামতো তিনি সমঝোতা করতে রাজী হয়েও মারা গেলেন। আমরা কারোর কোন মালই লুটপাট করিনি।
লাহুড়িয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তুহিন পাটোয়ারী পুলিশের সামনে ভাংচুর লুটপাট হয়েছে। এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভাংচুর যা হয়েছে তা খুনের পরদিনই হয়েছে।অপরদিকে কিছু চুরি হচ্ছে। লোহাগড়া থানার ওসি আশিকুর রহমান বলেন, ওই এলাকায় নিজের মালামাল লুট করে অন্যের ওপর দোষারোপের চেষ্টা করছে। আমরা চেষ্টা করছি পুরো ঘটনা সামাল দেবার। এলাকায় সেনাবাহিনী,পুলিশ সবসময়ই টহল দিচ্ছে। পুলিশ আসামী ধরতে ব্যস্ত রয়েছে।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আছে।
প্রসঙ্গত, ঈদের দিন বিকালে লাহুড়িয়া পশ্চিমপাড়ায় মনিরুল জমাদ্দার ও মিল্টন জমাদ্দার গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারে খুন হন মুক্তিযোদ্ধা আকবর শেখ। এসময় উভয় পক্ষের ১৫ জন আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধা আকবর শেখ মনিরুল জমাদ্দারে সমর্থক ছিলেন। এঘটনায় ৩ এপ্রিল নিহতের স্ত্রী আকলিমা বেগম বাদী হয়ে ১২ জন এবং অজ্ঞাত ৪/৫ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামী লাহুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান কামরান সিকদার। এদিকে মামলার ৩ নং আসামী মো. জাকারিয়া মোল্যা ওরফে জাকির হোসেন (৫৫) ও ১০নং আসামী- সাদ্দাম হোসেন ওরফে মো. জাহিদুল ইসলামকে (৩২) গ্রেফতার করা হয়েছে।