হুমায়ন কবির মিরাজ, শার্শা (যশোর) প্রতিনিধি
যশোরের শার্শা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের বুঝতলা গ্রামে বিরল প্রজাতির একটি মেছো বাঘ (Fishing Cat) আটক করেছেন গ্রামবাসীরা। এটি বিড়াল প্রজাতির একটি বন্যপ্রাণী, যা দিন দিন বিলুপ্তির পথে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই প্রাণীটি বর্তমানে বিপন্ন তালিকাভুক্ত।
স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার (১০ জুন) সকালে গ্রামের একটি পুকুরপাড়ে মেছো বাঘটিকে দেখে প্রথমে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তারা। পরে সচেতনভাবে বাঁশ ও জালের সাহায্যে প্রাণীটিকে আটক করে একটি নিরাপদ স্থানে রাখেন।
খবর পেয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থলে পাঠান। দুপুরের দিকে শার্শা বন বিভাগের একটি দল সেখানে পৌঁছে প্রাণীটিকে উদ্ধার করে তাদের হেফাজতে নেয়।
শার্শা বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার বলেন, “এটি একটি বিড়াল প্রজাতির মেছো বাঘ, যা মূলত জলাভূমি ও ঝোপজঙ্গলে বাস করে। লোকালয়ে চলে আসায় হয়তো পথ হারিয়ে পড়েছিল। এটি বাংলাদেশে বিরল ও বিপন্ন একটি প্রজাতি।”
তিনি জানান, মেছো বাঘটিকে বন বিভাগের কার্যালয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সুস্থ হয়ে উঠলে উপযুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হবে।
শার্শার উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজি নাজিব হাসান বলেন, “মেছোবাঘ (Prionailurus viverrinus) একটি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী, যা শুধুমাত্র মাছ খেয়ে বাঁচে। বাংলাদেশে ১৯৭৪ ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত। মেছোবাঘ সাধারণত জলাভূমি, নদী, প্রবাহ, অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ, ম্যানগ্রোভ ইত্যাদি পরিবেশে বাস করে। এর উপস্থিতি ঐ অঞ্চলের জলাভূমির অবস্থার সূচক হিসেবে কাজ করে। সাঁতার পারদর্শী হওয়ায়, মেছোবাঘ এধরনের পরিবেশে সহজেই খাপ খাওয়াতে পারে। এর গায়ে ছোপছোপ দাগ থাকায় অনেকে একে চিতাবাঘ ভেবে ভুল করে, যদিও এটি মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীসমূহকে সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি, গ্রামবাসীরা একটি মেছোবাঘ আটক করেছে, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা শার্শা উপজেলা বন কর্মকর্তাকে পাঠাই এটি উদ্ধার করতে। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মেছোবাঘটিকে নিরাপদ স্থানে ছেড়ে দিবে।”
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, মেছো বাঘ বা Fishing Cat একটি মাঝারি আকৃতির বিড়াল জাতীয় প্রাণী, যা মাছ খেতে অভ্যস্ত। এরা জলাশয় ও নদী-নালার পাশে বাস করে এবং পরিবেশের খাদ্যচক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু বনাঞ্চল ধ্বংস ও জলাভূমি সংকটের কারণে আজ এদের অস্তিত্ব বিপন্ন।