বাবুগঞ্জ( বরিশাল)প্রতিনিধি
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদি) আসনটি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি আলোচনায় আছে বিএনপি’র অভ্যন্তরীণ কোন্দল। এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা এই দ্বন্দ্ব এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে দলের বিজয় সম্ভাবনা হুমকির মুখে।
বরিশাল-৩ আসনে বিএনপির দীর্ঘদিনের নেত্রী সেলিমা রহমান এবং সিনিয়র নেতা জয়নুল আবেদীন—দুইজনই প্রভাবশালী ও ওজনদার প্রার্থী হিসেবে পরিচিত। তবে তাঁদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এবং প্রতিহিংসার রাজনীতি স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিভক্ত করে ফেলেছে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে সেলিমা রহমান দলীয় মনোনয়ন পান, কিন্তু জয়নুল আবেদীন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রায় ২৫ হাজার ভোট বিভাজিত করেন। এর ফলেই ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট টিপু সুলতানের কাছে সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হন সেলিমা রহমান।
পরবর্তী নির্বাচনে, জয়নুল আবেদীন মনোনয়ন পান, কিন্তু এবার সেলিমা রহমানের অনুসারীরা কৌশলে প্রতিশোধ নেয় বলে অভিযোগ। তাতে মাত্র ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপুর কাছে পরাজিত হন জয়নুল আবেদীন। স্থানীয় নেতারা বলছেন, দলীয় ঐক্যের অভাবই বিএনপির পরপর দুটি পরাজয়ের মূল কারণ।
এ ছাড়াও জনপ্রিয় নেতা বাদ পড়ায় বাড়ছে অসন্তোষ
এই আসনের মূল দুই উপজেলা—বাবুগঞ্জ ও মুলাদিতে বিএনপির তৃণমূল নেতৃত্বের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সঞ্চার ঘটেছে।
মুলাদি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান সত্তার খা, যিনি এলাকাবাসীর কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়, তাকে দলীয় কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র সেলিমা রহমানের ঘনিষ্ঠ হওয়ায়। একইভাবে বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইসরাত হোসেন কচি তাল্লুকদারকেও একই কারণে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, জয়নুল আবেদীনের সাবেক জামাতা অ্যাডভোকেট আসাদও এবার মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং তিনিও সেলিমা রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা দলীয় কোন্দলকে আরও ঘনীভূত করতে পারে।
আন্দোলনে অনুপস্থিত, ভোটে দৌঁড়ঝাঁপ—নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন
স্থানীয়দের অভিযোগ, জাতীয় আন্দোলন, মিছিল-মিটিং বা ছাত্র-যুব সংগঠনের কার্যক্রমে এই দুই পক্ষের কোনো ভূমিকাই নেই। বরং মনোনয়ন কেন্দ্রিক প্রতিযোগিতা আর পাল্টাপাল্টি প্রোগ্রাম নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন তাঁরা। অনেকেই এটিকে ‘রাজনৈতিক নাটক’ হিসেবে উল্লেখ করছেন, যা জনগণের মাঝে নেতিবাচক বার্তা ছড়াচ্ছে।
নতুন নেতৃত্বের দাবিতে তরুণদের জোয়ার
একাধিক জরিপ ও সামাজিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বরিশাল-৩ আসনে এবার ৬০% ভোটারই নতুন ও তরুণ প্রজন্মের। এই তরুণরা দলীয় কোন্দলের রাজনীতি নয়, বাস্তবিক নেতৃত্ব ও ছাত্র-তরুণবান্ধব প্রতিনিধি চায়।
এই প্রেক্ষাপটে উঠে এসেছেন বাবুগঞ্জের সন্তান, ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ও ত্যাগী নেতা ইঞ্জিনিয়ার মো. মাহফুজুল আলম মিঠু। তিনি বর্তমানে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি এবং সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল (বরিশাল বিভাগ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি বলেন,
“আমি সবসময় বাবুগঞ্জ-মুলাদির মানুষের পাশে থেকেছি, বিশেষ করে ছাত্রসমাজের পাশে। আমি বিশ্বাস করি, এই তরুণরাই আগামী দিনে রাজনীতির রূপ পরিবর্তন করবে।”
তিনি আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপত্র কেনার ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর মতে, একটি ঐক্যবদ্ধ, সংগ্রামী ও তরুণ নেতৃত্ব ছাড়া বরিশাল-৩ আসন পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়।
বরিশাল-৩ আসনে বিএনপির জন্য এটি একটি টার্নিং পয়েন্ট। দীর্ঘদিনের কোন্দল নিরসন করে নতুন নেতৃত্ব ও তরুণদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত না করলে, আসনটি আবারও হারানোর ঝুঁকি থেকে যাবে।