1. nabadhara@gmail.com : Nabadhara : Nabadhara ADMIN
  2. bayzidnews@gmail.com : Bayzid Saad : Bayzid Saad
  3. bayzid.bd255@gmail.com : Bayzid Saad : Bayzid Saad
  4. mehadi.news@gmail.com : MEHADI HASAN : MEHADI HASAN
  5. jmitsolution24@gmail.com : support :
  6. mejbasupto@gmail.com : Mejba Rahman : Mejba Rahman
শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন

ঘরে ঘরে শিশুদের জ্বর, দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু-করোনা

নবধারা ডেস্ক
  • প্রকাশিতঃ সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫
  • ৬৭ জন নিউজটি পড়েছেন।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ করে শিশুদের জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেড়ে গেছে। বেশিরভাগ শিশু প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে, পরে যুক্ত হচ্ছে বমি। অনেক শিশু কিছুই খেতে পারছে না, শরীর দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ছে। কেউ কেউ পাতলা পায়খানায় ভুগছে। কিছু শিশুর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত উপসর্গ হিসেবে দেখা দিচ্ছে মুখের ভেতরে ঘা, গলাব্যথা ও চোখ লাল হয়ে যাওয়া। ফলে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে অভিভাবকদের মধ্যে।

চিকিৎসকরা বলছেন, এটি সাধারণ ভাইরাল জ্বর হতে পারে। তবে ইনফ্লুয়েঞ্জা বা এন্টারোভাইরাসও হতে পারে। সতর্কতার অংশ হিসেবে আক্রান্ত শিশুদের সিবিসি, ডেঙ্গু, টনসিল ও থ্রোট ইনফেকশনের নানা পরীক্ষা করানো হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে জ্বর ও বমির পাশাপাশি ডি-হাইড্রেশন হওয়ায় স্যালাইন দিতে হচ্ছে।

সোমবার (২৩ জুন) রাজধানীর ডিএনসিসি হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি শিশু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময় ভাইরাস জনিত সংক্রমণ বাড়ে। তবে এবার অনেক শিশুর উপসর্গ শুরু হচ্ছে হঠাৎ করে। এমনকি দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ছে শরীর। চিকিৎসকের কাছে দেরিতে যাওয়ার কারণে বেশিরভাগ শিশুর অবস্থা জটিল হয়ে উঠছে।

জ্বর নিয়ে বরগুনা থেকে ঢাকায় শিশু মারুফ, লড়ছে মৃত্যুর সঙ্গে

গায়ে হালকা জ্বর দেখে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে কিনে ওষুধ খাওয়ানো শুরু হয় ১১ বছরের শিশু মারুফকে। দুই দিন অতিবাহিত হলেও জ্বর কমে না, বরং অবস্থা খারাপ হতে থাকে। তৃতীয় দিন নিয়ে যাওয়া হয় বরগুনা জেলা হাসপাতালে। ধরা পড়ে ডেঙ্গু। ততক্ষণে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। শুরু হয় পাতলা পায়খানা।

মারুফের বাবা খাইরুল ইসলাম জানান, বরগুনা হাসপাতালে ফ্লোরে শুয়ে তিন দিন কাটালেও উন্নতি না হওয়ায় বরিশালে নেওয়া হয়। সেখানেও অবস্থার উন্নতি না হলে অবশেষে ঢাকায় এনে উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কোভিড বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করি। চিকিৎসকরা বলছেন, সঠিক সময়ে হাসপাতালে না নেওয়ার কারণে ওর শরীর এত খারাপ হয়ে গেছে। অবস্থা এখন খুবই শোচনীয়। তারা এখন আল্লাহর কাছে দোয়া করতে বলেছেন আমাদের।
মারুফের বাবা বলেন, মারুফের চোখ ফোলা, মুখও দেখলাম ফুলে গেছে। পানিও খাওয়ানো যায় না। এখন স্যালাইন চলছে।

হাসপাতালে ভর্তি অর্ধেক শিশুই জ্বরে আক্রান্ত

ঢাকা শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, রোগীদের মধ্যে অর্ধেকই জ্বর নিয়ে আসা শিশু। সেখানে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছিলেন উত্তরা থেকে ছয় বছরের শিশু তাওহীদকে নিয়ে আসা মা সুমাইয়া খাতুন।

সুমাইয়া খাতুন বলেন, গত পরশু হঠাৎ করেই বাবুর জ্বর আসে। দুপুরের মধ্যে ১০২ ডিগ্রি হয়ে যায়। বিকেলে বমি করে দুইবার। কিছুই খেতে পারছে না। বাড়ির পাশের ফার্মেসি থেকে এনে দুই দিন ওষুধ খাইয়েছি। এরপরও ভালো না হয়ে উল্টো অবস্থা খারাপ হচ্ছিল, তাই ভয়ে ঢাকায় নিয়ে এসেছি। এখন ডাক্তার বলছে পরীক্ষা করতে হবে।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আছে ৮ বছর বয়সী মারিয়া ইসলাম। তার বাবা হাসানুল ইসলাম বলেন, শনিবার সন্ধ্যার দিকে মেয়ের শরীরটা হঠাৎ ঠান্ডা-ঠান্ডা লাগছিল। মনে হলো একটু জ্বর। রাতে জ্বরটা বাড়ে, পরদিন সকালে উঠে দেখি মুখের ভেতরে কয়েকটা লাল দাগ। পরে চোখটা একদম লাল হয়ে যায়। বলছিল গলায় কিছু গেলে ব্যথা করছে। ভাত খেতে গিয়ে কেঁদে উঠছিল।

তিনি জানান, পরদিন মারিয়াকে স্থানীয় চিকিৎসক দেখালে তারা বলেন— দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। শিশু হাসপাতালে জায়গা হয়নি, তাই সোহরাওয়ার্দীতে ভর্তি করিয়েছি। এখন ও শুধু স্যালাইন নিচ্ছে। খাবার একেবারেই খেতে পারছে না।

একসঙ্গে নানা ভাইরাস সক্রিয়, বাড়ছে আতঙ্ক

করোনাভাইরাসের নতুন উপধরনের উপস্থিতির পাশাপাশি বর্তমানে দেশে বাড়ছে ডেঙ্গু, ভাইরাল ফ্লু, হ্যান্ড-ফুট-মাউথ ডিজিজ, ডায়রিয়া ও রোটা ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। একসঙ্গে একাধিক ভাইরাসের বিস্তারে জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে।

উপসর্গগুলোর মধ্যে মিল থাকায় মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে জ্বর, বমি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা, পাতলা পায়খানা কিংবা খাওয়ার অক্ষমতার মতো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ছে।

বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে সংক্রমণের হার এবং জটিলতা তুলনামূলকভাবে বেশি। ফলে শিশুর জ্বর দেখা দিলে পরিবারের অন্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। ডেঙ্গু নাকি করোনা নাকি অন্য কিছু- এ নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যাচ্ছেন তারা। এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নানা গুজব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

জনস্বাস্থ্যবিদদের মতে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে সুনির্দিষ্ট বার্তা প্রচারের পাশাপাশি পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন ও গণমাধ্যমকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী ঢাকার পোস্টকে বলেন, দেশে একসঙ্গে বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। এর মধ্যে করোনা, ডেঙ্গু, রোটা ভাইরাস ও ভাইরাল ফ্লু উল্লেখযোগ্য। উপসর্গের মিল থাকায় অনেকে বুঝে উঠতে পারেন না কোনটি আসলে কী? এতে তারা অকারণে ভয় পেয়ে যাচ্ছেন। অনেকে চিকিৎসা নিতে দেরি করেন বা ভুল ওষুধ খেয়ে জটিলতা বাড়ান।

তিনি আরও বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সচেতনতা বাড়ানোই এই পরিস্থিতি মোকাবিলার একমাত্র পথ। জ্বর, বমি বা পাতলা পায়খানার মতো উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে স্থানীয় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। প্রয়োজনে করোনা ও ডেঙ্গুর টেস্ট করাতে হবে। কারণ, সময়মতো শনাক্ত করা গেলে এসব রোগের বেশিরভাগই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

শিশুদের জ্বরে অবহেলা নয়, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক নয়

বর্তমানে রাজধানীর শিশু হাসপাতালে জ্বরের রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেশি। এই অবস্থায় চিকিৎসকেরা জ্বরকে অবহেলা না করে উপসর্গ বুঝে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রতিটি পরিবারের অভ্যন্তরীণ সচেতনতা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

শিশু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, এখন জ্বরের রোগী একটু বেশি আসছে। কারণ, ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা বাড়ছে, আবার এই সময়ে ভাইরাল জ্বরও বেড়ে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, কোনো একটি পরিবারে প্রথমে শিশু আক্রান্ত হচ্ছে, এরপর একে একে ওই পরিবারের সবাই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে।

এ চিকিৎসকের ভাষ্যমতে, রোগীরা সাধারণত তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া কিংবা শরীরে লালচে দাগ— এসব উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন।

তিনি সতর্ক করে বলেন, শুরুতে শিশুদের প্যারাসিটামল সিরাপ দেওয়া যেতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনোভাবেই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না। এটি বিপজ্জনক হতে পারে।

জ্বর হলে শিশুদের খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা দেখা দেয় উল্লেখ করে ডা. মাহফুজুর বলেন, তবুও অভিভাবকদের চেষ্টা করতে হবে কিছু না কিছু খাওয়ানোর। বিশেষ করে প্রচুর পানি ও তরলজাতীয় খাবার দিতে হবে। পাশাপাশি ডিম ও মুরগির মাংসের মতো প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে, যাতে তাদের শরীর ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।

জ্বর মানেই আতঙ্ক নয়, তবে অবহেলা বিপদ ডেকে আনতে পারে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, এই সময়টায় ভাইরাল সংক্রমণ বাড়ে। তবে এবার ডেঙ্গুর সঙ্গে মিশ্র ভাইরাল ইনফেকশন এবং কিচু ক্ষেত্রে হালকা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে, যা চিকিৎসা ব্যবস্থাকে কিছুটা চাপের মধ্যে ফেলেছে।

শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা নিয়ে তিনি বলেন, শিশুরা তুলনামূলকভাবে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। কারণ তারা সংক্রমণের প্রতি বেশি সংবেদনশীল, আবার তারা নিজের অসুস্থতা সঠিকভাবে প্রকাশও করতে পারে না। এ কারণে শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। বাড়িতে কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে ঘরোয়া চিকিৎসা বা ফার্মেসি-নির্ভর ওষুধের বদলে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিচ্ছি।

চিকিৎসা ব্যবস্থায় সরকারের প্রস্তুতি সম্পর্কে ডা. আবু জাফর বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহরের হাসপাতালগুলোতে সেবা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে বরগুনা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, পটুয়াখালীর মতো জেলাগুলোর দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। বরগুনা থেকে বেশ কিছু গুরুতর ডেঙ্গু রোগী আসায় আমরা সেখানে মেডিকেল টিম পাঠিয়েছি এবং প্রয়োজনীয় মেডিসিন ও স্যালাইন সরবরাহ করেছি।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি সচেতনতা, সময়মতো চিকিৎসা এবং মিডিয়ার ইতিবাচক ভূমিকার মাধ্যমে আমরা এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারব। অভিভাবকদের বলব— জ্বর মানেই আতঙ্ক নয়, তবে অবহেলা করলে সেটি বিপদে রূপ নিতে পারে। তাই দেরি না করে পরীক্ষা করান, চিকিৎসা নিন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved সর্বস্বত্বঃ দেশ হাসান
Design & Developed By : JM IT SOLUTION