রাকিব চৌধুরী, নবধারা
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার নদ-নদী, খাল-বিল আর জলাভূমিতে বর্ষার পানি বাড়তেই গ্রামাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ও জীবিকার অন্যতম বাহন হয়ে উঠেছে নৌকা। আর এই চাহিদা পূরণে উপজেলার গোপালপুর, তারাইল, জোয়ারিয়া, ভেন্নাবাড়ি অঞ্চলে নৌকা তৈরির ব্যস্ততায় মেতে উঠেছেন কারিগর ও মহাজনেরা।
এ সময়টায় প্রতিটি গ্রামে বাড়ির আঙিনায় পানি জমে থাকায় স্থানীয়দের যাতায়াতে ছোট-বড় নৌকা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কেউ মাছ শিকার, কেউ গবাদি পশুর খাবার সংগ্রহ, কেউবা যাতায়াতের প্রয়োজনেই নির্ভর করছেন নৌকার ওপর।
তারাইল ঘুরে দেখা গেছে, কাঠমিস্ত্রিরা নানা আকৃতির সুন্দর নৌকা তৈরি করছেন। ছোট নৌকা ৫-৬ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও, মাঝারি ও বড় নৌকার দাম ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ৩০ থেকে ৫০ হাত লম্বা বিশাল আকৃতির নৌকাও তৈরি করছেন কারিগররা।
মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা শুরু হলেই নৌকার চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণে। একজন মহাজন মাসে ২০-৩০টি নৌকা বিক্রি করেন, যার মূল্য লক্ষাধিক টাকা। এতে তাদের মাসিক লাভ দাঁড়ায় প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা।
নৌকা কারিগর সাধন বলেন, ‘একেকটা নৌকা তৈরি করতে ৫-৬ দিন সময় লাগে। প্রতি মাসে আমরা ৪-৫টি নৌকা তৈরি করতে পারি। মজুরির ভিত্তিতে বর্ষার মৌসুমে মাসে ২০-২২ হাজার টাকা আয় হয়।’
অন্য কারিগর অলক বিশ্বাস বলেন, ‘বর্ষার সময় আমাদের কাজ বেড়ে যায়। মহাজনেরা চুক্তিতে আমাদের দিয়ে নৌকা তৈরি করান। প্রতিদিন ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পাই। মৌসুম শেষে অন্য পেশায় যুক্ত হই।’
মাছ শিকারি দাউদ বলেন, ‘বর্ষায় চারদিক যখন পানিতে ডুবে যায়, তখন মাছ ধরে বিক্রি করে সংসার চালাই। সে জন্যই নৌকা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি মৌসুমে তারাইল থেকে ৫-৬ হাজার টাকায় নৌকা কিনে আনি।’
তবে নৌকা তৈরির উপকরণের দাম বাড়ায় কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন মহাজনরা। মহাজন বলাই বলেন, ‘আগে একেকটা নৌকায় ২-২.৫ হাজার টাকা লাভ হতো, এখন লাভ কমেছে। কিন্তু পুরোনো পেশা ছেড়ে যাওয়া যায় না। তাই প্রতিবছর মৌসুম শুরু হলেই নৌকা তৈরির কাজ শুরু করি।’
এ অঞ্চলের নৌকা কোটালীপাড়া, নাজিরপুর, চিতলমারীসহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। বর্ষা শেষে এখানকার কারিগররা কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। তবে বর্ষার সময়টুকু তাদের জীবনে আনে অর্থনৈতিক স্বস্তি ও কর্মচাঞ্চল্য।