জেলা প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জঃ
গোপালগঞ্জের উন্মুক্ত জলাশয়সহ একটি বিলের (ডাঙার) বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে অবৈধভাবে বানা (পাটা) (বাঁশের তৈরি বেড়া) ও নেট দিয়ে ঘিরে মাছ চাষ করছেন প্রভাবশালীরা। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে এ অবস্থা চলার কারণে আশপাশের পাঁচ গ্রামের গরিব মৎস্যজীবী ও কৃষিজীবীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এসব অসহায় পরিবারগুলো বর্ষা মৌসুমের প্রায় ৬ মাস বিল থেকে শাপলা, মাছ ও শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন জলেও নামতে পারেন না এসব এলাকার জনসাধারণ।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ৫নং ডুমরিয়া ইউনিয়নের শালুখা মৌজার এ বিলের চারপাশে রয়েছে বড়ডুমরিয়া, ভৈরবনগর, কাঠিগ্রাম, সালুখা ও ভেন্নাবাড়ি গ্রাম। গ্রামগুলোয় শতাধিক কার্ডধারী মৎস্যজীবীসহ কয়েক শ’ অসহায় কৃষক পরিবারের বাস। বিশাল এই বিলের মধ্যে রয়েছে ‘ছুচখালি’ ও লড়া নামে দুটি বড় খাল ও তিনটি শাখা খাল। রয়েছে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি ও মাছের ঘের। বর্ষা মৌসুমে এসব পরিবার জীবিকা-নির্বাহ করে এই বিলের মাছ ও শাপলা বিক্রি করে। গবাদি পশু ও হাঁসের খাবারসহ নানা প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করে এখান থেকে। শুকনো মৌসুমে এসব জমি থেকে মাত্র একটি ফসল পান কৃষকেরা। এ নিয়েই তাদের জীবন-জীবিকা চলে।
কিন্তু এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বিগত ৮ বছর ধরে এই বিলে প্রায় ৫ শ’ একর এলাকাজুড়ে বানা ও নেট দিয়ে ঘিরে মাছ চাষ করছেন। প্রতিটি খালের মুখে বানা দিয়ে আটকে রেখেছেন। এখন এলাকার গরীব মৎস্যজীবী ও সাধারণ মানুষ কেউ আর মৎস্য শিকার করতে পারেন না। গবাদি পশু ও হাঁসের খাবারসহ অন্য কোন প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে ডাঙায় নামতে পারেন না। অনেকে নিজের জমিতেও নামতে পারেন না। এছাড়া শুকনো মৌসুমে সব পানি ও মাছ যখন খালগুলোতে নেমে যায়; তখন খালগুলোও আটকে রাখে। ফলে কৃষক জমিতে সেচ দিতে পারেন না বিধায় ফসলের ফলন কমে যাচ্ছে। বানা দিয়ে আটকে রাখার কারণে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে খালগুলো ক্রমেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে এবং প্রাকৃতিক মাছেরও বিলুপ্তি ঘটছে। এসবের প্রতিবাদ করায় ভুক্তভোগীদের অনেককে মিথ্যা মামলাসহ জীবন নাশেরও হুমকি দেয়া হয়েছে।
সালুখা গ্রামের অমিতোষ বিশ্বাস বলেন, আমরা ভীষন সমস্যায় আছি, মাছ মারতে জলে নামতে পারছি না। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক সাহিদা সুলতানা নবধারা কে বলেন, এ বিষয়ে আমি একটি অভিযোগ পেয়েছি।বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিগ্গিরই বিলটির খালসহ দখলমুক্ত হবে বানার ঘের এমনটিই প্রত্যাশা এলাকার মৎসজীবি ও কৃষিজীবি সাধারণ মানুষের।