সবিতা রায়ঃ বিশেষ প্রতিনিধিঃ
মিতা হক একজন স্বনামধন্য বিশিষ্ট বাংলাদেশী রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন,আজ তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি বাংলাদেশ বেতারের সর্বোচ্চ গ্রেডের তালিকাভুক্ত জনপ্রিয় শিল্পী। তার একক ভাবে মুক্তি পাওয়া মোট ২৪টি অ্যালবাম আছে।
এর মধ্যে ১৪টি ভারত থেকে ও ১০টি বাংলাদেশ থেকে। মিতা হক এর সব গুলো অ্যালবাম রবীন্দ্র সংগীত শ্রোতাদের নিকট জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তিনি ২০১৬ সালে শিল্পকলা পদক লাভ করেন। সঙ্গীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২০ সালে একুশে পদক প্রদান করে। মিতা হক ১৯৬২ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রথমে তার চাচা ওয়াহিদুল হক এবং পরে ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খান ও সনজীদা খাতুনের কাছে গান শেখেন। মিতা হক ১৯৭৪ সালে বার্লিন আন্তর্জাতিক যুব ফেস্টিভালে অংশ নেন। ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি তবলা বাদক মোহাম্মদ হোসেন খানের কাছে সঙ্গীত শেখা শুরু করেন। শিল্পী মিতা হক ১৯৭৭ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। তিনি সুরতীর্থ নামে একটি সঙ্গীত প্রশিক্ষণ দল গঠন করেন যেখানে তিনি পরিচালক ও প্রশিক্ষকে হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া তিনি ছায়ানটের রবীন্দ্রসঙ্গীত বিভাগের প্রধান ছিলেন। মিতা হক প্রয়াত অভিনেতা খালেদ খানের স্ত্রী। তাঁর চাচা দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রপথিক ও রবীন্দ্র গবেষক ওয়াহিদুল হক। মেয়ে জয়িতাও রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী। একমাত্র মেয়ে ফারহিন খান জয়িতা দেশের একজন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী। মিতা হক শৈশব কৈশোর কাল থেকেই চাচা ওয়াহিদুল হকের নিকট গান শেখা শুরু করেন। পরবর্তী পর্যায়ে ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খান ও সন্জীদা খাতুনের নিকট থেকে শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। মিতা হক বাংলাদেশ বেতারের সর্বোচ্চ গ্রেডের তালিকাভুক্ত শিল্পী।
১৯৯০ সালে বিউটি কর্নার থেকে প্রকাশিত হয় মিতা হকের প্রথম রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম ‘আমার মন মানে না’। সংগীতায়োজনে ছিলেন সুজেয় শ্যাম। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় ২০০টি রবীন্দ্রসংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন মিতা হক।তাঁর এককভাবে মুক্তি পাওয়া মোট ২৪টি অ্যালবাম আছে। এর মধ্যে ১৪টি ভারত থেকে ও ১০টি বাংলাদেশ থেকে। মিতা হক ২০১৬ সালে শিল্পকলা পদক লাভ করেন। সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২০২০ সালে একুশে পদক প্রদান করে। সংগীত পিপাসুদের জন্য তিনি ‘সুরতীর্থ’ নামে একটি গানের স্কুলও প্রতিষ্ঠা করে অসংখ্য ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন নিরলসভাবে । বাংলাদেশের সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম পীঠস্থান ছায়ানটের রবীন্দ্রসংগীত বিভাগের প্রধান হিসেবেও মিতা হক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মিতা হক বাংলাদেশের রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন পরিষদের সহসভাপতিও ছিলেন। এখানে নিজের যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন।
মিতা হক অভিনেতা-পরিচালক খালেদ খানের সাথে ভালোবেসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।খালেদ ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২০১৭ সালে মিতা হককে বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র পুরস্কার দেওয়া হয়। একই বছর চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ‘রবি-চ্যানেল আই রবীন্দ্রমেলা’য় রবীন্দ্র সঙ্গীতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে মিতা হককে ‘চ্যানেল আই আজীবন সম্মাননা’ দেওয়া হয়। ২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার – ও পেয়েছেন। মিতা হক ২০২১ সালের ১১ই এপ্রিল ইহকাল ত্যাগ করে পরপারে চলে যান।
আজকের এই প্রয়াণ দিবসে মিতা হককে নবধারা পরিবারের পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা।