নড়াইলের লোহাগড়ায় ১৯৭১ সালে জীবনের ঝুকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দানকারী জাহানারা বেগম (৮০)। ২০১৮ সাল থেকে নিজ বাড়িতে নাতী-নাতনী ও গ্রামের শিশুদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান। এবার নাতি-নাতনী ও তাদের সহপাঠিদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাতে তিনি চট্রগ্রাম গেলেন । ২০১৮ সালে তিনি প্রথম নাতীনাতনীদের উঠান বৈঠকের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান। এরপর থেকে প্রতি বছরই গ্রামের শিশুদের উঠান বৈঠকের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনিয়ে থাকেন। কিন্ত এবছর ডিসেম্বর মাসে জাহানারা বেগম চট্রগ্রামে তার মেয়ে শাহিনুর পারভীনের বাসায় থাকায় সেখানে নাতি-নাতনী ও তাদের সহপাঠিদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাবে।
বুধবার(২৮ডিসেম্বর) বিকালে মেয়ের বাসার সামনে নাতীনাতনী ও তাদের সহপাঠিদের নিয়ে উঠান বেঠকের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাতে বসেন। নাতী নাতনী ও তাদের সহপাঠিরা মুগ্ধ হয়ে নানীর কাছে থেকে সেই ভয়াবহ ৭১ সালের পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচারের কাহিনী। কিভাবে তারা গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে। মা বোনকে ক্যাম্পে ধরে নিয়ে নির্যাতন করেছে । গ্রামের মানুষের হাঁস, মুরগী,ছাগল গরু লুট করে নিয়ে খেয়েছে। পরে কিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে নিজ জীবনের ঝুকি নিয়ে তাদের খাওয়া থাকার ব্যবস্থা করেন, সে দুঃসাহসিক গল্প ও তাদের শোনান। তাদের মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা বই এবং বঙ্গবন্ধুর লেখা অসামাপ্ত আত্মজীবনী এবং বই পড়ার পরামর্শ দেন ।
লোহাগড়া পৌরসভার গোপীনাথপুর গ্রামের সাবেক উপজেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল ইসলাম খান বলেন,সাহসী জাহানারা বেগম মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের আশ্রয় দিয়ে দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে ছিলেন। বর্তমানে তিনি উঠান বৈঠকের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বংশ পরম্পরায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য যে উদ্যোগ গ্রহন করেছেন, এটা একটা অসাধারণ উদ্যোগ। জাহানারা বেগমের মত প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার উচিৎ শিশুদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে এভাবে তুলে ধরা।৭১ সালে নিজ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতে ২০ জনের একদল মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়ে তাদের খাওয়ানো এবং নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করেন। তার এ ত্যাগের কথা মুক্তিযোদ্ধারা আজও ভোলেননি।