প্রাকৃতিক নৈস্বর্গের লীলাভূমি ব্যাকওয়াটার্স খ্যাত স্বরূপকাঠি পর্যটনশিল্পের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। অপরিমেয় সৌন্দর্য বিস্তৃত এই উপজেলায় যুগ যুগ ধরে দেশি বিদেশি পর্যটকদের টেনেছে।ব্যাকওয়াটার্স দেশি বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে স্বরূপকাঠির পর্যটন শিল্প সমৃদ্ধ করছে অর্থনীতি। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ২০০ কোটি। এখান থেকে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৪ লাখেরও বেশি বিদেশি পর্যটক আসে এবং দেশীয় ট্যুরিস্টের সংখ্যা এখন ২ কোটির অধিক। আগামী অর্থবছরগুলোতে এ সংখ্যা আরো বাড়ানোর লক্ষে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও পর্যটন শিল্পের স্টেকহোল্ডারগণ কাজ করে যাচ্ছেন।
গ্রামীণ পর্যটনকে বিদেশিদের কাছে আকৃস্ট করতে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড গ্রহণ করেছে নানামুখী উদ্যোগ। গ্রাম্য পর্যটনকে বিদেশিদের কাছে আকৃস্ট করে ২০২৩ সালে জিডিপিতে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ অবদান রাখার আপ্রান চেস্টা ট্যুরিজম বোর্ডের। বর্তমানে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে আয় প্রায় ৭৬ দশমিক ১৯ মিলিয়ন ডলার। ভারত আয় করেছে ১০ হাজার ৭২৯ মিলিয়ন ডলার, মালদ্বীপ ৬০২ মিলিয়ন ডলার, শ্রীলঙ্কায় ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার এবং নেপালে ১৯৮ মিলিয়ন ডলার, যা সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশের তুলনায় অপ্রতুল। বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২৫ সাল নাগাদ পর্যটনশিল্প থেকে প্রতিবছর ২ ট্রিলিয়ন ডলার আয় হবে। ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৫১টি দেশের পর্যটকেরা বাংলাদেশে ভ্রমণ করবেন, যা মোট জিডিপির ১০ শতাংশ অবদান রাখবে।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালে মোট কর্মসংস্থানের ১ দশমিক ৯ শতাংশ হবে পর্যটনশিল্পের অবদান (WTTC)। পর্যটনশিল্পের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার রোল মডেল। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য দিন বদলের সনদ ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পর্যটনশিল্পের ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে পর্যটক আসার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণকল্পে প্রত্যাশিত অবকাঠামো উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত বিনোদন বিকাশের সুযোগ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, পর্যটন এলাকায় হোটেল বৃদ্ধি এবং পর্যটন ক্ষেত্রে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে পারলে, নবদিগন্তের ভোরের সূর্যের আলোর ন্যায় আলোকিত হবে অমিত সম্ভাবনার বাংলাদেশের পর্যটন।
এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, স্বরূপকাঠির পর্যটনকে বিকশিত করার লক্ষে ইতোমধ্যেই নানামুখি কর্মসুচি হাতে নিয়েছে ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন (ট্যুয়াস) এর মাধ্যমে।২০২২ সনের ২৭ সেপ্টেম্বর ব্যাকওয়াটার্স স্বরূপকাঠিতে নৌ রেলী করে বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপন করে ট্যুয়াস ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড । একই বছরের ২১ ও ২২ অক্টোবর নবাগত ট্যুর অপারেটর ও গাইড হিসেবে ৬০জনকে ট্রেনিং দেয় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড।
স্বরূপকাঠি ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন ট্যুয়াস এর আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান সম্পূর্ন প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে এ উপজেলার পর্যটন।২০০ বছরের পুরনো আটঘর কুরিয়ানা পেয়ারা বাগান পর্যটক টানলেও এ এলাকায় দেখার মতো রয়েছে আরো অনেক কিছু।তিনি উল্লেখ করেন ৭/৮ ফিট পানিতে নিমজ্জিত জমির উপর ভাসমান সবজি চারা উৎপাদন,বলদিয়ার ক্রিকেট ব্যাট, দেশীয় কাঠের মনভোলানো ডিজাইনের ফার্নিচার গ্রাম,নৌকা বানানোর গ্রাম, লবন উৎপাদন কারখানা,নারিকেলের ছোবরা শিল্প, পাপোষ শিল্প, জাহাজ শিল্প, স্বরূপকাঠির নার্সারি শিল্প, এক কিলোমিটার চওড়া সন্ধ্যা নদীতে জেলেদের ইলিশ মাছ ধরা ও শতবর্ষী অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্টান সহ রয়েছে ৩১ টি ভাসমান বাজার। যা ইকো ট্যুরিজমের উৎকৃস্ট উদাহরন হতে পারে বাংলাদেশের জন্য। এসব দেখে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের বিপনন ও ব্রান্ডিং এর সহকারি পরিচালক মহিবুল ইসলামের সহযোগিতা ও আন্তরিকতায় ইতোমধ্যে স্বরূপকাঠিতে ট্যুর অপারেটরদের নিয়ে তিনটি ট্রেনিং হয়।যা স্বরূপকাঠির জনসাধারনের মধ্যে বেশ সারা ফেলে।
এরই ধারাবহিকতায় স্বরূপকাঠি ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনের সদস্যরা পর্যটক আকর্ষনের জন্য চলতি বছরের আগস্ট মাসে ৪দিন ধরে স্বরূপকাঠির ঐতিহ্য ও সন্ধ্যা নদীর ইলিশ মেলার আয়োজন করে আটঘর কুরিয়ানা ইউনিয়নে।
মেলা আয়োজন কমিটির অন্যতম সদস্য কার্তিক হালদার আকাশ বলেন স্বরূপকাঠির পর্যটনকে বিকশিত করার লক্ষে মহিবুল ইসলাম ও ট্যুর অপারেটর আসাদুজ্জামানের ভূমিকা সর্বাগ্নে।এখাতে স্বরূপকাঠিতে সরকার পৃষ্ঠপোষকতা করলে ব্যাকওয়াটার্স স্বরূপকাঠি থেকে কয়েক কোটি টাকা প্রতি মাসে আয় করতে পারে সরকার।
ট্যুর অপারেটর মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, স্বরূপকাঠিতে ট্যুরিস্টদের জন্য রাত্রীযাপনের ব্যবস্থা করা গেলে ব্যাকওয়াটার্স এ অঞ্চল হবে ট্যুরিস্টদের জন্য স্বর্গরাজ্য।সেইসাথে ট্যুর অপারেটর ও গাইডদের কর্মসংস্থান হবে।যা এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভুমিকা পালন করবে।