টুঙ্গিপাড়া থানায় গতকাল ( রবিবার) যোগদান করেছেন অফিসার ইনচার্জ খন্দকার আমিনুর রহমান। ইতিমধ্যে সদ্য সাবেক অফিসার ইনচার্জ এস.এম কামরুজ্জামান সদ্য যোগদানকৃত অফিসার ইনচার্জ খন্দকার আমিনুর রহমানকে তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন।আলোচিত সমালোচিত সদ্য সাবেক অফিসার ইনচার্জ এস.এম কামরুজ্জামানকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে বলে গোপন সূত্রের খবর।
জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ ক্যাপ্টেন এম মুনসুর আলীর পূর্ন জন্মভূমি সিরাজগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার সন্তান খন্দকার আমিনুর রহমানকে টুঙ্গিপাড়ায় যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে —
• জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ টুঙ্গিপাড়ায় হওয়ায় তাকে দিনের বেশিরভাগ সময় ই ব্যস্ত থাকতে হবে ভিআইপিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে। এতে করে তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কম মনোনিবেশ করতে পারবেন।
• টুঙ্গিপাড়ায় বেশ কয়েকটি রুট দিয়ে মাদক প্রবেশ করে। তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য, বাঁশবাড়িয়া রুট যেখান থেকে কোটালীপাড়া এবং পিরোজপুরের নাজিরপুরের মালিখালি দিয়ে মাদক প্রবেশ করে।
দ্বিতীয়তঃ পাটগাতি শেখ লুৎফর রহমান সেতু রুট যেখান থেকে বাগেরহাটের চিতলমারী ও পিরোজপুরের নাজিরপুর দিয়ে মাদক প্রবেশ করে।
তৃতীয়তঃ ঘোনাপাড়া রুট যেখান থেকে যশোর, খুলনা, মোল্লাহাট এবং গোপালগঞ্জ থেকে টুঙ্গিপাড়ায় মাদক প্রবেশ করে।
চতুর্থতঃ গোপালপুর রুট যেখান থেকে কোটালীপাড়া হয়ে মাদক প্রবেশ করে। টুঙ্গিপাড়ার জনমানুষের যে প্রত্যাশা, এসব মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে অতিতে আশাতীত সাফল্য দেখাতে পারেনি টুঙ্গিপাড়া থানা পুলিশ। সদ্য সাবেক অফিসার ইনচার্জ এস.এম কামরুজ্জামানের আমলে মাদকের অভয়ারণ্য হয়ে হঠে টুঙ্গিপাড়া।ওসি এস.এম কামরুজ্জামান এসব মাদক কারবারীদের দমন না করে নিরবে বানিজ্য করার কাহিনী লোকমুখে শোনা গেছে। তাই নবাগত খন্দকার আমিনুর রহমানের সাফল্য ব্যর্থতা অনেকটা নির্ভর করবে এই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে।
• টুঙ্গিপাড়ার বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্য দিবালোকে জুয়ার আসর বসে। জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও বাড়ি ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে। এসব আসরে প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।সদ্য সাবেক অফিসার ইনচার্জ এস.এম কামরুজ্জামানের আমলে এসব জুয়ার আসর হতে মাসহারা নেবার ঘটনা অনেকটা ওপেন সিক্রেট। তাই জুয়া খেলা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে নতুন ওসিকে সতর্কতার সাথে সাহসী ভূমিকা পালন করতে হবে।
• টুঙ্গিপাড়ায় গ্রামে গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। যেটি মোকাবেলা করতে গিয়ে পক্ষ-বিপক্ষের অপপ্রচারনায় পড়তে হবে তাকে। সেটি নিরপেক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করাও নবাগত ওসি খন্দকার আমিনুর রহমানের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
• জিটি স্কুল ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে বখাটেদের দাঁড়িয়ে থাকা এবং ছাত্রীদের ইভটিজিং রুখতে তাকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
• সম্প্রতি টুঙ্গিপাড়ার শেখ রাসেল শিশু পার্ক ও পাটগাতী বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত লঞ্চঘাট এলাকায় কয়েকটি কিশোর গ্যাং মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এসব কিশোর গ্যাং বেপরোয়া হয়ে বাইক চালানো, মোবাইল ফোন ও টাকা ছিনতাই সহ বড় ধরনের অন্যায়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এসব অপরাধকেও শক্ত হাতে দমন করতে হবে নবাগত ওসিকে।
• স্থানীয় রাজনীতির গ্রুপিং-লবিং এ জড়িয়ে না পড়া তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
• টুঙ্গিপাড়া থানায় মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে অনীহার সংস্কৃতি বেশ কিছুদিন ধরে চলে আসছে। কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে ভুক্তভোগীরা থানায় মামলা করতে গেলে থানা মামলা নিতে তালবাহানা করে। যেসব দরিদ্র-হতদরিদ্র পরিবার রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট নয় অথবা ফোনের তদবীর নেই সেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে সাধারণত তারা মামলা দায়ের করতে পারেন না কিংবা মামলা নেওয়া হয় না। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা গোপালগঞ্জ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে এ সংস্কৃতি হতে বের হয়ে সাধারন মানুয়ের আস্থার শেষ জায়গা যে থানা সে ধারায় ফিরতে হবে। এ বিষয়টি টুঙ্গিপাড়া থানার ভাবমূর্তি কিছুটা নষ্ট করেছে। এটি উত্তরণের জন্যও তাকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। এসব সমস্যা মোকাবেলা করে নবাগত ওসি খন্দকার আমিনুর রহমান শান্তিপ্রিয় টুঙ্গিপাড়াবাসীর প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পারবে এই প্রশ্নের উত্তর সময়ের কাছে তুলে রাখা হলো।