শামীম শেখ, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মা নদীতে জাটকা ইলিশ সংরক্ষণ সপ্তাহের উদ্বোধন ও নৌ রেলী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
“জাটকা ধরা বন্ধ হলে, ইলিশ উঠবে জাল ভরে”- প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর ৮ এপ্রিল মঙ্গলবার উপজেলার দৌলতদিয়া ৬ নং ফেরিঘাট এলাকায় পদ্মা নদীর পাড়ে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
এতে বলা হয়, বিশ্বের ১১ টি দেশের নদ-নদীতে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু স্বাদে-গন্ধে বাংলাদেশের ইলিশ বিশ্ব সেরা। তাছাড়া বিশ্বের মোট ইলিশ উৎপাদনের ৮৬ ভাগ উৎপাদন হয় বাংলাদেশে। এটা হতে দেশের মোট জিডিপির ১ শতাংশ পাওয়া যায়। এই ইলিশের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে সুপরিচিত। এই রুপালী সম্পদ আমাদের রক্ষা করতেই হবে। তাহলে দেশের কল্যাণ হবে এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট জেলে ও ব্যবসায়ীরাও লাভবান হবেন। সময়মতো জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষা করা গেলে সারা বছর কম দামে দেশের মানুষ ইলিশ মাছ খেতে পারবেন।
উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন রাজবাড়ীর স্হানীয় সরকার অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাজহারুল ইসলাম।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নাহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন রাজবাড়ীর সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান, কোস্ট গার্ডের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার (সিপিও) শফিকুল ইসলাম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল হুদা, গোয়ালন্দ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম প্রমূখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলে নেতা আসলাম মোল্লা তার বক্তব্যে অভিযোগ করে বলেন, বিগত দিনে জেলে কার্ড বিতরনে অনিয়ম করা হয়েছে। যে কারনে শুধু দৌলতদিয়া ইউনিয়নেই অন্তত ৪’শ প্রকৃত জেলে সরকারী খাদ্য সহায়তা হতে বঞ্চিত রয়েছেন। গত বছর কাল বৈশাখী ঝড়ে ৪ জন জেলের ৫ টি মাছ ধরার বড় নৌকা ডুবে ভেসে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত জেলেরা কোন ধরনের প্রনোদনা পায়নি। বঞ্চিত জেলেরা বারবার অফিসে ধর্ণা দিয়েও নিবন্ধিত হতে পারেন নি। অথচ বহু অমৎস্যজীবী অনিয়মের মাধ্যমে জেলে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে সরকারী সুবিধা ভোগ করছে।
পদ্মা নদীর জেলে সেকেন শেখ, চানমিয়া শেখ,বাবু সরদার, লোকমান সরদার,মিঠু খান সহ কয়েকজন বলেন, তারা বারবার মৎস্য অফিসে ধর্না দিয়েও তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। ঝড়ে নৌকা হারালেও কোন ক্ষতিপূরন পাননি তারা।
রাজবাড়ী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল হুদা তার বলেন, গোয়ালন্দ উপজেলায় ১২৬৬ জন কার্ডধারী জেলে রয়েছে। তাদেরকে ইতোপূর্বে ৮০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। তবে দৌলতদিয়া এলাকায় বাদ পড়া জেলেদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এবং তালিকা হতে অমৎস্যজীবীদের বাদ দিতে প্রয়োজনে তালিকা হালনাগাদ করা হবে।
তবে ভুয়া জেলেদের অন্তর্ভুক্তির দায় শুরু মৎস্য বিভাগের নয় বলে তিনি দাবি করেন। এর সাথে সংশ্লিষ্ট আরো অনেকে সংশ্লিষ্ট বলে তিনি জানান।
ইউএনও নাহিদুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, ইলিশ আমাদের জাতীয় সম্পদ। এ সম্পদ রক্ষায় আমরা প্রয়োজন হলে কঠোর হব। জেলেদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
প্রধান অতিথি মাজহারুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, ৮ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ঘোষনা করেছে। সেইসাথে ১ নভেম্বর হতে ৩০ জুন পর্যন্ত ১০ ইঞ্চির নিচে জাটকা ইলিশ আহরন, পরিবহন ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও বিনিময় দণ্ডনীয় অপরাধ গন্য করা হবে। জাটকা সংরক্ষণ আইন অমান্যকারী ব্যাক্তি কমপক্ষে ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২ বছরের সশ্রম কারাদন্ড অথবা ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
তিনি আরও বলেন, নিষিদ্ধকালীন সময়ে নদীতে জাটকা শিকার বন্ধ রাখা হলে আমাদের নদীগুলো বড় বড় ইলিশে ভরে উঠবে। তাই সাময়িক কষ্ট হলেও তিনি জাটকা আহরন বন্ধে জেলেদের প্রতি আহবান জানান।