জেলা প্রতিনিধি, পিরোজপুর
সরকারি অর্থে এসব ঘর গড়ে উঠেছিল নতুন জীবনের আশ্বাস নিয়ে। কিন্তু সময়ের প্রবাহে সেই স্বপ্ন এখন ভেঙে পড়ছে পিলারভাঙা ঘরের দেয়ালে। দুই শতাধিক পরিবার দিন গুনছে, একটি বাসযোগ্য ছাদের নিচে শান্তিতে থাকার অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলার সাঈদখালীর চরে গড়ে ওঠা সরকারি আবাসন প্রকল্পের ১৮০টি বসতঘরের এখনকার চিত্র— জীর্ণদশা, টিনবিহীন ছাদ, আর বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া ঘরবাড়ি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত এই আবাসনের ঘরগুলো এখন প্রায় বসবাসের অযোগ্য। দীর্ঘ বিশ বছরে ঘরগুলোতে কোনো সংস্কার হয়নি। ভেঙে গেছে পিলার, ছিঁড়ে গেছে টিনের ছাউনি। ফলে বর্ষা এলে প্রতিটি ঘরে ঢুকে পড়ে পানি, পরিবারগুলো চলে যায় অমানবিক কষ্টে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সাঈদীকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিতর্ক থাকায় বিগত সরকারের সময় এই এলাকার উন্নয়ন কার্যক্রম প্রায় বন্ধ ছিল। যার সরাসরি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এখানকার সাধারণ মানুষকে।
আবাসনের বাসিন্দা আবদুল মালেক হাওলাদার বলেন,”আল্লামা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী এমপি থাকাকালে এই আবাসন তৈরি হয়েছিল। তারপর থেকে আর কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। ঘরের টিন ভেঙে গেছে, পিলারও ভেঙেছে। বৃষ্টি হলে আমরা পানির মধ্যেই থাকি।”
৬০ ঊর্ধ্বো বাসিন্দা মিনারা খাতুন বলেন,”আমাদের সন্তান ও নাতি নাতনিদের নিয়ে বর্ষায় অনেক কষ্ট হয়। ঘরের মধ্যে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। কোনমতে কষ্ট করে দিন পার হচ্ছে আমাদের। আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থাকলেও এখনই স্বস্তি মিলছে না বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান বলেন,”এই আবাসনের জরাজীর্ণ ঘরগুলো আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় একক ঘরে রূপান্তরের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে।’
এমন অবস্থায় বসবাসকারীরা বলছেন, অনুমোদনের আগেই জরুরি ভিত্তিতে অন্তত টিনের ছাউনি ও পিলারগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেয়া উচিত। এক সময় আশার প্রতীক হয়ে উঠা এই আবাসন প্রকল্প এখন নিজেই পরিণত হয়েছে বঞ্চনার নিদর্শনে।