রুহুল আমিন, যশোর প্রতিনিধি
যশোরে করোনা ভাইরাসের নতুন ধরণ ওমিক্রনে আক্রান্তদের জন্য সদর হাসপাতালসহ প্রতিটি উপজেলা হাসপাতালে একটি করে করোনা ওয়ার্ড প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। কিন্তু করোনা পরীক্ষা করার জন্য কোন কীট নেই। প্রতিরোধ করার জন্য নতুন করে টিকার সরবারহও নেই। সিভিল সার্জনের দপ্তরে টিকা থাকলেও তারমধ্যে বেশিরভাগ টিকার মেয়াদ উর্ত্তীণ হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যশোরে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন আতঙ্ক বিরাজ করছে। কোভিড-ওমিক্রন এক্সবিবি এর লক্ষণগুলি জ্বর কাশি ছাড়াই মাথা, গলা, পিঠ ও জয়েন্টে ব্যথা, নিউমোনিয়া, ক্লাটকীয়ভাবে ক্ষুধা হ্রাস পাবে। কোভিড- ওমিক্রনএক্সবিবি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ৫ গুণ বেশি বিষাক্ত ও মৃত্যুর হারও বেশি। অতি অল্প সময়ের মধ্যে লক্ষণগুলি অত্যন্ত তীব্র হয়ে উঠবে ও স্পষ্ট লক্ষণগুলির অনুপস্থিতিতেও পরিবর্তন ঘটবে। অল্প সময়ের মধ্যে এটি সরাসরি ফুসফুসের “জানালা” প্রভাবিত ও নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখাতে শুরু করে। কোভিড ওমিক্রন-এক্সবিবি সংক্রামিত অল্প সংখ্যক রোগীকে জ্বর-মুক্ত এবং ব্যথা-মুক্ত হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়, তবে এক্স-রেতে হালকা নিউমোনিয়া দেখা যায়। এছাড়া নাকের গহ্বরের মধ্য দিয়ে তুলার সোয়াব পরীক্ষা করে কোভিড-ওমিক্রন এক্সবিবি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ও নাসোফ্যারিঞ্জিয়াল পরীক্ষার সময় মিথ্যা নেতিবাচক পরীক্ষার উদাহরণ বাড়ছে। তাই এই ভাইরাসটি খুবই ধূর্ত। এর ফলে ভাইরাসটি সম্প্রদায়ের মধ্যে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। সরাসরি মানুষের ফুসফুসকে সংক্রামিত করে। ভাইরাল নিউমোনিয়া সৃষ্টি ও তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যা সৃষ্টি করে।
ইতিমধ্যে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত এক নারী শনাক্ত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ইবনেসিনা হসপিটালে নমুনা পরীক্ষার পর ওই নারীর শরীরে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়ে। শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও সর্দি লাগা অবস্থায় ওই নারীকে হসপিটালে ভর্তি করা হয়।
রোগীর উপসর্গ দেখে দায়িত্বরত চিকিৎসকের সন্দেহ হলে করোনাভাইরাস পরীক্ষার নির্দেশনা দেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টার দিকে তার নমুনা পরীক্ষা করা হলে করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। সদর হাসপাতালে পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় ইবনে সিনা হাসপাতালে তার পরীক্ষা করা হয়। ওই মহিলা করোনা পজেটিভ হওয়ার পর থেকে করোনা প্রতিরোধের জন্য জেলা প্রশাসন, সদর হাসপাতাল কৃতপক্ষ নড়েচড়ে বসেছে। কিন্তু করোনা প্রতিরোধের জন্য কোন টিকা নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। সেইসাথে নেই করোনা পরীক্ষা করার কোন কীটও নেই। করোনা প্রতিরোধে কার্যকরি কোন ভূমিকা পাওয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত বলেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে সাত বেডের একটি ওয়ার্ড প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। তারমধ্যে একটি মহিলা বেড রয়েছে। চারটি বেড দিয়ে করোনা ওয়ার্ডের যাত্রা শুরু করা হয়েছিল। প্রয়োজন হলে এ ওয়ার্ডে ত্রিশটি বেডের ব্যবস্থা করা যাবে। হসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য কীট নেই। কোন টিকাও নেই। টিকার বিষয়টি মূলত সিভিল সার্জন দেখেন। করোনা দু ধরণের পরীক্ষা করা হয়। র্যাপিড এন্টিজেন ও আর টি পিসিআর। কীটের অভাবে হাসপাতালে র্যাপিড এন্টিজেনের টেস্ট করা সম্ভব হচ্ছে। আর টি পিসিআর টেস্টটি যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পন্ন হয়। র্যাপিড এন্টিজেনের টেস্টের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে কীটের কীটের জন্য চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে আমরা অগ্রসর আছি। করোনা রোগীদের সেবা দেয়ার শতভাগ প্রস্তুতি রয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা বলেন, করোনা টিকা কেন্দ্রীয়ভাবে সংকট রয়েছে। তাই নতুন করে টিকা পাওয়া যাচ্ছে না। যশোরে যেসব টিকা আছে আগামী জুলাই মাসে তার মেয়াদ শেষ হবে। যশোর পৌরসভায় আছে ২২০০ ও সদর উপজেলায় অল্প কিছু টিকা আছে। অগ্রহী ব্যক্তিরা টিকা নিতে পারবেন। করোনা পরীক্ষা করার জন্য কীটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দ্রুতই কীট পাওয়া যাবে। আশা করছি আগামী সপ্তাহ থেকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। এছাড়াও করোনার প্রস্তুতি হিসেবে প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা ওয়ার্ড প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, যতটা সম্ভব জনাকীর্ণ স্থান এড়িয়ে চলা, খোলা জায়গায় এমনকি ১.৫ মিটার দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পর পর হাত সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ব্যবহার্য জিনিপত্র জীবাণুনাশক পদার্থ দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। দরজার হাতল, সুইচ, লিফটের বাটন জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার রাখুন ও মাস্ক ব্যবহার করুন। কেননা কোভিড-ওমিক্রন এক্সবিবি কোভিড-১৯ মহামারীর চেয়েও মারাত্মক, যে কারণে সকলকে সচেতন ও সতর্ক হতে হবে।