রুহুল আমিন, যশোর প্রতিনিধি
আগামী ২৬ জুন থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা শুরু হবে। যশোর শিক্ষা বোর্ডের এবারের পরীক্ষার্থী ১ লাখ ১৬ হাজার ৩১৭ জন। ২০২৩ সালে এ বোর্ড থেকে ১ লাখ ৩৪ হাজার ২১৩ শিক্ষার্থী মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় পাশ করে। সেই হিসেবে গত দুই বছরে যশোর বোর্ড থেকে ১৭ হাজার ৮৯৬ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. আব্দুল মতিন।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান, ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার তুলনায় যশোর শিক্ষা বোর্ডে ২০২৫ সালে পরীক্ষার্থী কমেছে ৬ হাজার ১৯৪ জন। তবে বেড়েছে কেন্দ্রের সংখ্যা। এ বছর বোর্ডের অধীনে ৫৭৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ১৬ হাজার ৩১৭ পরীক্ষার্থী ২৪০টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় বসবে। গত বছর পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক লাখ ২২ হাজার ৫১১ জন।
তিনি আরো জানান, ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী রয়েছে ৫৮. হাজার ৪৭২ জন এবং ছাত্র ৫৭ হাজার ৮৫৪ জন। এরমধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ২২ হাজার ৭৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১১ হাজার ২৮৪ জন ছাত্র এবং ১০ হাজার ৭৯৩ জন ছাত্রী। মানবিক বিভাগের ৮১ হাজার ৪৭৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৯ হাজার ২৫৬ ছাত্র এবং ৪২ হাজার ২২০ জন ছাত্রী। ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের ১২ হাজার ৭৬৪ জন পরীক্ষার্থীর শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭হাজার ৩০৫ ছাত্র এবং ৫ হাজার ৪৫৯ ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিবে। যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২৪০টি কেন্দ্রে অংশ নেবে ৫৭৫ কলেজের পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে খুলনার ৪৬ কেন্দ্রে অংশ নেবে ১১১ কলেজের পরীক্ষার্থী, যশোরের ৫০ কেন্দ্রে অংশ নেবে ১১৬ কলেজের পরীক্ষার্থী, বাগেরহাটের ২১ কেন্দ্রে অংশ নেবে ৪৯ কলেজের পরীক্ষার্থীরা, সাতক্ষীরার ২৩টি কেন্দ্রে অংশ নেবে ৭৪ কলেজের পরীক্ষার্থীরা, কুষ্টিয়ার ২৩ কেন্দ্রে অংশ নেবে ৭৯ কলেজের পরীক্ষার্থীরা, চুয়াডাঙ্গার ১২ কেন্দ্রে অংশ নেবে ২৪ কলেজের পরীক্ষার্থী, মেহেরপুরের ৭ কেন্দ্রে অংশ নেবে ২২ কলেজের পরীক্ষার্থী, নড়াইলের ১১ কেন্দ্রে অংশ নেবে ২৪ কলেজের পরীক্ষার্থী, ঝিনাইদহের ২৭ কেন্দ্রে অংশ নেবে ৮৫ কলেজের পরীক্ষার্থী ও মাগুরার ২০ কেন্দ্রে অংশ নেবে ৩৯ কলেজের পরীক্ষার্থীরা।
চৌগাছার তরিকুল ইসলাম পৌর ডিগ্রি
কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটু বলেন, যশোর শিক্ষাবোর্ডকে ধন্যবাদ জানায় বোর্ডে কেন্দ্রের ভেন্যু প্রথা বাতিল করা হয়েছে। যার ফলে নিজ প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীদের নিজ কেন্দ্রের ভেন্যুতে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ থাকছে না। এতে করে পরীক্ষার কেন্দ্র অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি থাকবে না।
নানান কারণে ছেলে-মেয়েরা ঝরে পড়ছে উল্লেখ করে এস এম হাবিবুর রহমান পৌর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোজ্জামেল হক বলেন, এসএসসির তুলনায় এইচএসসিতে একজন শিক্ষার্থীকে তুলনামূলক বেশি দক্ষতা দেখাতে হয়। এরমধ্যে অনেকে নতুন কলেজে খাপ খাওয়াতে পারে না। যে কারণে সে ঝরে যায়।
তিনি আরও বলেন, কিছু বছর ধরে ছেলে-মেয়েদের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একটু বড় যখন হচ্ছে তখন পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের প্রতি মাত্রাতিরিক্তভাবে ঝুঁকে পড়ে পারিবারিক শৃঙ্খলাবোধ ক্ষতিগ্রন্ত হচ্ছে। সে পরিবারের নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের দায়িত্ববোধ কমে গেছে। শিক্ষকদের নির্দেশনা না মানাসহ এমন অসংখ্য প্রবণতা তৈরি হয়েছ এ জেনারেশনের মধ্যে। যার প্রভাব টোটাল শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর পড়েছে। যে কারণে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে।
যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. আবদুল মতিন বলেন, ভেন্যু প্রথা বাতিল করায় এবার ৬টি কেন্দ্র বেড়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় পরীক্ষার্থী কমেছে। কারণ শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির ঘাটতি থাকতে পারে। এজন্য হয়তো তারা অংশ নিচ্ছে না। তিনি জানান, নকলমুক্ত সুষ্ঠু পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। একাধিক ভিজেলেন্স টিম দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি আরো বলেন, যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা সুষ্ঠু পরিবেশে গ্রহণের লক্ষ্যে ১ জুন থেকে জেলার পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় সংখ্যক মূল উত্তরপত্র, ব্যবহারিক উত্তরপত্রসহ আনুসাঙ্গিক যাবতীয় মালামাল সরবরাহ করা শুরু হয়েছে। কেন্দ্র সচিবদের সাথে মতবিনিময় পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নকল ও অনিয়মকারীদের কোন ধরণের ছাড় হবে না। নকলের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান থাকবে। ২১ জুনের মধ্যে পরীক্ষা কেন্দ্রের যাবতীয় মালামাল সরবরাহ সম্পন্ন হবে। আশা করছি শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মধ্যদিয়ে আগামী ২৬ জুন থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে।