রুহুল আমিন, যশোর প্রতিনিধি
দুই দিনের বৃষ্টিতে সড়কে সৃষ্টি হওয়া খানা খন্দক ও ভাঙাচোরা সড়ক জোড়াতালির কাজ করতে গিয়ে দেওয়া হচ্ছে আস্ত ইটের সলিং। যশোর থেকে মাগুরা-ঢাকা সড়কপথে যাতায়াতের একমাত্র পথ যশোর-মাগুরা মহাসড়কের খাজুরা বাস ষ্ট্যাষ্ট এলাকায় দেখা গেছে এমন অবস্থা।
একই অবস্থা যশোর-ঝিনাইদহ, যশোর-খুলনা ও যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কেরও। এ তিনটি মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটার খানাখন্দ আর ছোট বড় গর্তে ভরা। এসব সড়কে সৃষ্ট গর্তগুলো বন্ধ করা হচ্ছে ইটের সলিং দিয়ে। বৃষ্টি হলেই ভেজা ইটের সলিং গাড়ির চাকায় লেগে গিয়ে ইটের আদলা ও খোয়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে পুরো সড়কে। খানাখন্দ ও ইটের আদলা, খোয়া ভর্তি এসব সড়কে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। অপরদিকে এসব সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনেরও যন্ত্রাংশের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। বিভিন্ন সময় সড়কগুলোতে সংস্কার কাজ করা হলেও দুর্ভোগের লাগাম টানতে পরেনি সড়ক বিভাগ।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, যশোর- খুলনা মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার, যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের নাভারণ থেকে বগআচড়াঁ পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার, যশোর-ঝিনাদহ মহাসড়কের কালীগঞ্জ পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কে এমন খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে আছে অনেকদিন। যেখানে যে কোন সময়ে ঘটতে পাড়ে বড় দুর্ঘটনা। যদিও প্রতিদিন ঘটছে ছোট খাট দুর্ঘটনা। বিশেষ করেন মটরসাইকেল, ইজিবাইক ও থ্রিহুইলার প্রতিনিয়ত পড়ছে দুর্ঘটনায়।
হাফিজুর রহমান নামে খাজুরা বাসষ্ট্যান্ড এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের এলালাকার রাস্তাসহ যশোর-মাগুরা-ঢাকা সড়কসহ পালবাড়ি-মনিহার সংযোগ সড়কটির বেহাল দশা। এই বড় বড় খানাখন্দ সৃষ্টিসহ রাস্তা উচুনিচু হয়ে আছে। মাঝে মাঝে খোয় বা ইট বিছিয়ে মেরামত করা হলেও বৃষ্টি কিংবা বড় গাড়ির কারণে কিছুদিনের মধ্যেই আগে অবস্থায় ফিরে যায়। সমায়িক এই মেরামত ব্যবস্থা কোন ভাবেই টেকসই হয়না। ফলে প্রতিনিয়ত এখানে ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটছে।
হারুন মোল্লা নামের নামের এক সিএনজিচালক বলেন, রাস্তায় যেমন খানাখন্দ যেমন দুর্ভোগ, তেমনি আরেক দুর্ভোগ হচ্ছে তাতে ইটের সলিং দেওয়া। এটা কোনো সমাধান না। এতে যাত্রীদেরও ভোগান্তি হয়। ইটের খোয়া আদলা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া সড়কে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয় মোটরসাইকেলসহ তিন চাকার যানবাহনগুলো।
নিউমার্কেট এলাকার কলেজ ছাত্র নাজমুল নিয়মিত মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন কলেজ ও মুল শহরের আসাযাওয়ার কাজে। তিনি বলেন, বিগত দিনে এসব সড়ক সংস্কারের নামে টেন্ডারবাজি এবং দুর্নীতি হয়েছে। এ কারণে বিগত কয়েক বছর ধরে যশোরের বিভিন্ন মহাসড়কে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লেও তা মেরামত ও স্থায়ী সংস্কার করতে বার বার ব্যর্থ হয়েছে সড়ক বিভাগ।
ব্যবসায়ী আরাফাত বলেন, প্রায় খানা খন্দকে ভরা এই রাস্তায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে থাকে বিশেষ করে সন্ধ্যার পর। রাতের আধারে খানা খন্দক ও ইটের সলিংয় ঠিকমতো বোঝা যায়না । পিছলে পড়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এমন দুর্ঘটনা অহরহ ঘটছে। মহাসড়কগুলোতে জায়গায় জায়গায় এমন ইটের সলিং আর খানাখন্দ দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানির মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, এ বছরও বর্ষায় যশোরের বিভিন্ন মহাসড়কগুলোতে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এগুলো জরুরি সংস্কারের উদ্যােগ নিয়ে থাকি। এছাড়া বিভিন্ন মহাসড়ক জরুরি সংস্কারের জন্য ৭ কোটি টাকার চাহিদা ঊর্ধ্বতন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জরুরি সংস্কারের ক্ষেত্রে মহাসড়কগুলোতে ইটের কাজ করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বর্ষা মৌসুমে বিটুমেনের কাজ করা যায় না। এ সময় জনগণের দুর্ভোগ কমাতে আমরা সড়কগুলো জরুরিভাবে ইট দিয়ে প্রাথমিক সংস্কার কাজ করে থাকি।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার বলেন, যশোরের সড়কগুলোর বেহাল দশা। ঘটনা সঠিক। সড়কগুলো সংস্কার করার জন্য সড়ক ও জনপদ বিভাগের সাথে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলোচনা করবো।