হুমায়ন কবির মিরাজ, বেনাপোল
যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দু’পাশে শতবর্ষী গাছগুলি একসময় ইতিহাসের সাক্ষী হলেও এখন রীতিমতো আতঙ্কের উৎসে পরিণত হয়েছে। বারবার সতর্কতা ও চিঠিপত্র চালাচালির পরও যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার সড়কপথে ঝুঁকিপূর্ণ এসব গাছ ও ডাল অপসারণে কার্যত কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে প্রতিনিয়ত পথে বের হলেই পথচারীদের বুক ধড়ফড় করছে—না জানি কোন মুহূর্তে মাথার ওপর পড়ে আসে গাছের ভাঙা ডাল কিংবা পুরো বৃক্ষটাই।
গত এপ্রিল মাসের ২৯ তারিখে যশোর জেলা পরিষদ থেকে সংশ্লিষ্ট তিন উপজেলা—যশোর সদর, শার্শা ও ঝিকরগাছা—প্রশাসনকে ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণের জন্য আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে বাস্তবে একমাত্র শার্শা উপজেলা প্রশাসন সেই নির্দেশনার ভিত্তিতে প্রায় ৮০ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ গাছ ও ডাল অপসারণ করেছে। অন্যদিকে, ঝিকরগাছায় এখনো কাটেনি একটি গাছের ডালও।
নাভারণ হাইওয়ে থানার ওসি রোকনুজ্জামানসহ একাধিক স্থানীয় সূত্রের মতে, চলতি বর্ষা মৌসুমে সড়ক ব্যবহারকারীরা তীব্র ঝুঁকিতে রয়েছেন। কারণ, হঠাৎ ঝড় বা সামান্য বাতাসেই গাছের ভাঙা ডাল পড়ে যাওয়ার ঘটনা বাড়ছে।
সাম্প্রতিক উদাহরণ হিসেবে জানা গেছে—নাভারণ কলোনি, বেনেয়ালি ও উপ-কর কমিশনার কার্যালয়ের সামনে একাধিক গাছ ও ডাল হঠাৎ করে সড়কে পড়ে গেছে। সৌভাগ্যবশত কোনো প্রাণহানি হয়নি, তবে এসব ঘটনায় কেউ আহত হলে বা মৃত্যু হলে দায় এড়ানো কঠিন হবে বলেই আশঙ্কা স্থানীয়দের।
স্থানীয় এক পরিবহন চালক বলেন, “গাড়ি চালাতে গেলে মনে হয় গাছ কখন যেন মাথায় পড়ে। বর্ষায় তো গাছগুলো আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।”
আরেক পথচারী বলেন, “রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে ভয় লাগে। সরকার তো জানে বিষয়টা, কিন্তু ঝিকরগাছায় কই কোনো কাজ দেখি না তো!”
ঝিকরগাছা নাগরিক অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক আশরাফুজ্জামান বাবু বলেন, “একই চিঠি পেয়ে শার্শা প্রশাসন কাজ করেছে, অথচ ঝিকরগাছা প্রশাসন এখনও গাছের দাম নির্ধারণের অজুহাতে বসে আছে। এটা গাফিলতির নমুনা।”
এ বিষয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভুপালী সরকার জানান, “আমরা বনবিভাগকে চিঠি দিয়েছি গাছগুলোর মূল্য নির্ধারণের জন্য। জবাব পেলে অপসারণ কার্যক্রম শুরু করবো।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি গাছ কাটা মানে শুধু কাঠ ফেলা নয়—মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর সেটি নিশ্চিত করতে যদি মাসের পর মাস লাগে, তাহলে সেটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
পরিবেশবাদীরা অবশ্য গাছ রক্ষার পক্ষেই থাকেন, তবে তাঁদের বক্তব্য—মরা গাছ রক্ষা নয়, জীবিত প্রাণ বাঁচান। কারণ ইতিহাস বা পরিবেশ রক্ষার নামে যদি প্রাণ হারায় সাধারণ মানুষ, তবে সেই দায় কেউ নিতে রাজি থাকবে না।