মাদারগঞ্জ( জামালপুর) প্রতিনিধি

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় ২৮টি সমবায় সমিতির প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকের ৩ হাজার কোটি টাকা আমানত উদ্ধারের দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো (২৫ জুন) উপজেলা পরিষদ ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছেন আমানতকারীরা। বিক্ষুব্ধ গ্রাহকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মাদারগঞ্জ সার্কেল মো. সাইদুর রহমান এবং মাদারগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুর রহমান সাইফ।

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাইদুর রহমান তার বক্তব্যে গ্রাহকদের আশ্বস্ত করে বলেন, “আপনারা আন্দোলনের ফলাফল পেতে যাচ্ছেন। সিআইডি ও সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে লোক এসেছেন এবং তারা তদন্তের কাজ শুরু করেছেন। আপনাদের দুঃখ-কষ্ট দেখে তারা এগিয়ে এসেছেন। পুলিশ সুপার মহোদয় বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেছেন এবং তার নেতৃত্বেই আমরা কাজ করছি। আমরা চাই আপনারা টাকা ফেরত পান।” তিনি গ্রাহকদের ধৈর্য ধরতে এবং আপাতত আন্দোলন বন্ধ রেখে তদন্তকারী দলকে কাজ করার সুযোগ দিতে অনুরোধ করেন। তিনি আরও বলেন, “আপনারা দীর্ঘ ১১ মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন। থানাও ঘেরাও করেছিলেন। আজ একটি ফলাফল পেতে যাচ্ছেন। আন্দোলন আপাতত বন্ধ রাখেন এবং তাদেরকে কাজ করতে দেন। একটু সময় দেন, গ্রাহক টাকা ফেরত পাবে ইনশাআল্লাহ।” তিনি শিবলুল বারী রাজুর নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনকে ‘সারা বাংলাদেশে নাড়া দিয়েছে’ বলেও উল্লেখ করেন এবং সিআইডি ও সমাজসেবার তদন্তে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। তদন্ত শেষে সমিতিগুলো থেকে আত্মসাৎকৃত অর্থ জব্দ করে গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া হবে বলে তিনি জানান, তবে এতে কিছুটা সময় লাগবে।

মাদারগঞ্জ মডেল থানার ওসি ইনচার্জ সাইফুল্লাহ সাইফ গ্রাহকদের সঙ্গে একমত পোষণ করে তাদের প্রতি আন্তরিকতার কথা জানান। তিনি বলেন, “এতগুলো মানুষের ভাগ্য নিয়ে যেন কেউ রাজনীতি করতে না পারে। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই – টাকা। টাকার বিকল্প ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য বা অভিলাষ নাই।” তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, “মানুষের ভাগ্য নিয়ে মিথ্যা আশ্বাস দেবেন না। যতটুকু পারবেন বলবেন, না পারলে বলবেন যে, এতটুকুর বাইরে আমার সাধ্য নাই।” তিনি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সিআইডি ও সমাজসেবার লোকজন কাজ শুরু করেছেন জানিয়ে সবাইকে ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ করেন।

টাকা উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক শিবলুল বারী রাজু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা আন্দোলন করে উপজেলায় এলেও কখনো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পাশে পাননি। তিনি গ্রাহকদের প্রতি ইউএনও’র আন্তরিকতার অভাবের কথা উল্লেখ করেন। তবে তিনি বর্তমান ওসি ইনচার্জ সাইফুল্লাহ সাইফের আন্তরিকতার প্রশংসা করে তাকে ধন্যবাদ জানান।

উল্লেখ্য, মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য ‘সহায়ক কমিটি’র ব্যানারে গত সোমবার (২৩ জুন) দুপুর থেকে তিন দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। জানা গেছে, মাদারগঞ্জ উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে সমবায় কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রায় শতাধিক প্রতারক ব্যক্তি বিভিন্ন নামে সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশন নিয়ে উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। ২০২৩ সালে ২৮টি সমবায় সমিতি প্রায় ৩০ হাজার আমানতকারীর প্রায় ৩ কোটি টাকা নিয়ে গা-ঢাকা দেয়। এরপর থেকেই গ্রাহকরা স্থানীয় প্রশাসনসহ জামালপুর জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে আমানতের টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন।