এস,কে শাহীন, মোল্লাহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধিঃ
বাগেরহাটের মোল্লাহাটে মধুমতী নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে শতাধিক বসতভিটা, উর্বর ফসলি জমি ও পাকা রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। অব্যাহত এ ভাঙনে ঝুঁকিতে রয়েছে মোল্লাহাটের সিংগাতী, গাড়ফা, গিরিসনগর, সোনাপুর ও চর-বাসুড়িয়া গ্রামের পাকা সড়ক, ফসলি জমি ও বসতভিটা। এবছর মধুমতি নদীতে বিলিন হয়েছে প্রায় ২ একর ফসলি জমি। ভাঙন রোধে টেকসই বাঁধ নির্মাণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণের ডিজাইন শেষে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) তৈরির কাজ চলছে।
সোনাপুর গ্রামের আবেদ আলী বলেন, মধুমতী নদী ভাঙতে ভাঙতে গ্রামের অধিকাংশ বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন আর সরে যাওয়ার জায়গা নেই কোথাও। বৃষ্টির মৌসুম এলেই গরু-বাছুর ও ঘরবাড়ি নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। এই দুই গ্রামের মানুষ ও তাঁদের জানমাল রক্ষার জন্য স্থায়ী বাঁধ দেওয়া প্রয়োজন।
একই গ্রামের নজরুল মোল্লা বলেন, মধুমতীর ভাঙনে প্রায় সাত বিঘা জমি হারিয়েছি। তিনবার ঘর সরিয়ে অন্য জায়গায় এনেছি। এখন আবার ভাঙলে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই আমার।
গিরিশ নগর গ্রামের মাধব চন্দ্র রায় বলেন, চোখের সামনেই অনেকের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হতে দেখেছি। ফসলি জমি, বাড়িঘর হারিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন অনেকে। এখন যাঁরা এই এলাকায় বসবাস করছেন তাঁদের অনেকেই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
সোনাপুর গ্রামের লুৎফর মোল্লা বলেন, মধুমতীর ভাঙনে সোনাপুর গ্রামের কয়েক জায়গায় পাকা সড়কটির অর্ধেক নদীতে বিলীন হয়েছে। অনেকের ফসলি জমিও নদীতে চলে গেছে। বিএডিসির সেচ সাপ্লাইয়ের জন্য নির্মিত ভবনটিও মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে মধুমতীর ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে টেকসই বাঁধ নির্মাণ ছাড়া কোনো উপায় নেই বলে দাবি করেন তাঁরা।
মোল্লাহাট উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস কে হায়দার মামুন বলেন ১৯৯৮ সাল থেকে বিভিন্ন জায়গায় মধুমতি নদী ভাঙনে মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা ঘাট ঘর বাড়ি ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। এমত অবস্থায় দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মানের ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড, সাংসদ শেখ হেলাল উদ্দিন ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই এলাকার মানুষের জানমাল রক্ষায় অতি দ্রুত বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এই জনপ্রতিনিধি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ওয়াহিদ হোসেন নবধারা কে বলেন, মোল্লাহাটে মধুমতি নদীর ভাঙ্গনে বেশ কয়েকটি এলাকায় ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। এবিষয়ে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মানের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানান তিনি।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য নবধারা কে বলেন, ‘মধুমতী নদীর ৩ হাজার ৪০০ মিটার এলাকা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। চলতি বছরে ২৫ টি বাড়িঘর ও প্রায় ২ একর জমি মধুমতি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের খুলনা বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীসহ আমি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছি। এখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ডিপিপি প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছি।
এ ছাড়া বৃষ্টির মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় তাৎক্ষণিকভাবে মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে জানান এই কর্মকর্তা।