মো:সাদ্দাম হোসেন, সিলেট প্রতিনিধি
সিলেটে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে।
দিবসটি উদ্যাপন উপলক্ষ্যে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে ৩১ বার তোপধ্বনি, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং বিভিন্ন বাহিনী ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কুচকাওয়াজ ও দেশাত্ববোধক ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়৷
সিলেট জেলা প্রশাসক মোঃ সারওয়ার আলমের সভাপতিত্বে কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে প্রদর্শন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার খান মোঃ রেজা-উন-নবী।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী অর্ধ শতাব্দীর অধিক সময়কালের শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার সকল প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা ও ব্যর্থতাকে অতিক্রম করে গভীর দেশপ্রেম, জাতীয় ঐক্য এবং রাষ্ট্র সংস্কারের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দারিদ্য বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা, সুশাসন, নারীর ক্ষমতায়ন ও সকলের জন্য মানসম্মত শিক্ষাসহ মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে স্বনির্ভর বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
সরকারের সঠিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও সময়োচিত সংস্কারমূলক পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের সামষ্টিক ও ব্যাষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে। কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে স্ব স্ব দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে আত্মনিয়োগ করাই হবে এ মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুবিধা প্রাপ্তিতে নতুন প্রজন্মকে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আলোকিত মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে যেন বাংলাদেশ বৈশ্বিক অগ্রযাত্রার মহাসড়কে একীভূত হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সেজন্য এ নির্বাচনে সক্রিয় অংশগ্রহণ সকল ভোটারের নাগরিক দায়িত্ব। এসময় তিনি ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সৎ, দেশপ্রেমিক ও যোগ্য জনপ্রতিনিধি নির্বাচন ও রাষ্ট্র সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
মুক্তিযুদ্ধে সিলেটের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সভাপতির বক্তৃতায় জেলা প্রশাসক বলেন, সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এই অঞ্চলটি ছিল একটি ভরসার জায়গা।
সিলেটের মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়, খাদ্য এবং আহতদের চিকিৎসাসহ সর্বক্ষেত্রে সাহসের সাথে সাহায্য করে গিয়েছেন। অনেক তরুণ সিলেট সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে অনেকে বিজয়ের আনন্দ নিয়ে ফিরেছেন আবার অনেকে ফিরে আসেননি। দেশের জন্য নিজের জীবনটুকু বিলিয়ে দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এদেশে আমরা এমন শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই যেখানে সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে আত্মবিশ্বাসের সাথে মাথা উচু করে
বাঁচতে পারবে। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের যে স্বাধীনতা দিয়েছেন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সহিংসতার পথ ছেড়ে দেশের স্বার্থকে সবার উপরে রেখে সে স্বাধীনতাকে রক্ষা করব এটিই আমাদের অঙ্গীকার।
মহান বিজয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ মুশফেকুর রহমান, পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী, পুলিশ সুপার আখতার উল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, শিশু-কিশোর সংগঠনের সদস্যবৃন্দসহ ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এসময় বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ আনসার-ভিডিপি, বাংলাদেশ জেল, রোভার স্কাউট, স্কাউট, গার্ল গাইড, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করে।

