1. nabadhara@gmail.com : Nabadhara : Nabadhara ADMIN
  2. bayzidnews@gmail.com : Bayzid Saad : Bayzid Saad
  3. bayzid.bd255@gmail.com : Bayzid Saad : Bayzid Saad
  4. mehadi.news@gmail.com : MEHADI HASAN : MEHADI HASAN
  5. jmitsolution24@gmail.com : support :
  6. mejbasupto@gmail.com : Mejba Rahman : Mejba Rahman
বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:৩০ পূর্বাহ্ন

সচিবালয়ের আগুন ‘স্যাবোটাজ’, কারা নিলো সুযোগ?

নবধারা ডেস্ক
  • প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১৯৫ জন নিউজটি পড়েছেন।

প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে ছিল—অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, শ্রম ও কর্মসংস্থান, যুব ও ক্রীড়া, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, সড়ক পরিবহন সেতু বিভাগ। ভবনের পাঁচ থেকে নয় তলা পর্যন্ত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর বুধবার রাতের আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে। 

সচিবালয়ে ভয়াবহ এ আগুনের ঘটনার পর থেকে উদ্বেগ, শঙ্কা ও সন্দেহ দেশজুড়ে। সরকার, রাজনৈতিক দল ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট—সবার মধ্যেই প্রশ্ন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ দায়িত্বশীল কর্তারা তদন্ত শেষ হওয়ার আগে আগুনের কারণ নিয়ে কিছু বলতে নারাজ। এর মধ্যেই সন্দেহের তীর ছুড়ে দিয়েছেন রাজনৈতিক ও ছাত্র-আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা।

একই সুরে কথা বলেছেন, ফায়ার সার্ভিসের সাবেক কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা।

তারা প্রশ্ন তুলেছেন, সচিবালয়ের ভেতরে থাকা ফায়ার সার্ভিসের ব্যর্থতা নিয়ে। এছাড়া ভেতরে সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। এখানে তৃতীয় কোনো পক্ষ সুযোগ নিয়ে আগুন লাগিয়েছে বলেও মনে করছেন ফায়ার সার্ভিসের সাবেক কর্মকর্তারা।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা স্যাবোটাজ (নাশকতামূলক) হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আগুনটা শর্ট সার্কিট থেকে হলে একসঙ্গে ৩-৪ জায়গায় লাগার কথা না। দুর্বৃত্তায়নে লাগানো আগুনেই এমনটা হয়।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ভোর রাত থেকে এই আগুন ফলো করেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা স্যাবোটাজ। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে এটা লাগানো আগুন, শর্ট সার্কিটের আগুন কখনো এভাবে লাগে না। এরমধ্যে কাল তো সচিবালয় বন্ধ ছিল। সুতরাং সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, সচিবালয় তো রাষ্ট্রের ‘কি’ পয়েন্ট। কেপিআইভুক্ত এলাকা। যদিও এখানে আগেও একাধিকবার আগুন লেগেছে। পিডব্লিউ কাজও করেছে। আবার কেন তাহলে আগুন লাগলো? আমরা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এভাবে কখনো দুর্ঘটনার আগুন লাগে না।

স্ট্যান্ডার্ট গার্মেন্টসে লাগা আগুনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ফায়ার সার্ভিসের সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, দুর্বৃত্তরা যখন আগুন লাগায় তখন একসঙ্গে একাধিক স্থানে আগুন লাগে। এমন দুর্বৃত্তায়নের আগুন দেখেছি। এখানেও (সচিবালয়) তাই হয়েছে। এটা শর্ট সার্কিট না, আগুন লাগানো হয়েছে।

নথি পোড়ানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে

রাষ্ট্রের এমন স্পর্শকাতর গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আগুন লাগাটা কোনোভাবেই মানা যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আপনি জানেন এখানে অনেক কিছু আছে চুরি হতে পারে, কিন্তু আপনি দরজা খুলে রাখলে হবে? এখানে তাই হয়েছে। এখানে এতো এতো গুরুত্বপূর্ণ নথি। সেখানে চুরি হতে পারে, স্যাবোটাজ হতে পারে। সেখানে তো নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা। এখানে তো লোকাল গার্ড ছিল, নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা তো তাদের বিজনেসের অংশ। সেখানে সরকার পুলিশ কতক্ষণ থাকবে তার চেয়ে তো নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই রাখতে হবে। কে কে ছিল, কে ঢুকেছিল সেটা বের করতে হবে।

ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ 

এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, ‘এখানে তো ফায়ার সার্ভিস ছিল। ভেতরে তো ফায়ার স্টেশন আছে। আর ক্যামেরাও তো আছে। তা তো সার্বক্ষণিক দেখভালের লোক আছে। সচিবালয়ের ভেতরে ও বাইরে এক বা দুজন লোক ছিল না, দেড় দুই শতাধিক নিরাপত্তা কর্মী ছিল। তারা কি সবাই একসঙ্গে ঘুমাচ্ছিল? সেটা তো হতে পারে না।

নাশকতা বিবেচনায় গুরুত্বসহ তদন্ত হোক

এই ঘটনাকে স্যাবোটাজ (নাশকতা) বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এটা তো ডিজাস্টার। স্যাবোটাজ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যেটা আরও অন্য জায়গাতেও হতে পারে। কি পয়েন্ট ইন্সটিটিউশনের জায়গায় এমন ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এটা কেউ চান্সও নিয়েছে মনে হচ্ছে। গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি।

ফায়ার সার্ভিসের সাবেক ডিজি নাঈমের মতে এটা নাশকতা

সচিবালয়ের আগুনকে সরাসরি নাশকতার অংশ হিসেবে দেখছেন ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই আগুন স্যাবোটাজ, অবশ্যই এটা সন্দেহের শুরুতে রাখতে হবে। লাগানো আগুন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এটা কেপিআইভুক্ত এলাকা। আমাদের এখন চ্যালেঞ্জিং সময় যাচ্ছে। এটা ধরে নিতে হবে যে, এই আগুনের মোটিভ কি হতে পারে? এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে সচিবালয়ের চারটা ফ্লোরে আগুন, যেখানে চারটা কমিশন চলছে। যেখানে বিভিন্ন ধরনের নথিপত্রের প্রয়োজন হবে। এই আগুনের টার্গেটই হচ্ছে সেই গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়িয়ে দেওয়া। কারণ কমিশনের জন্য বিভিন্ন সময় নথিপত্রের প্রয়োজন হবে। যে উচ্চপদস্থ কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের সব কিছুর আগে বিবেচনায় রাখতে হবে যে এটা স্যাবোটাজ। যদি প্রথমেই ‘স্যাবোটাজ’ না ধরে তদন্ত করা হয় তাহলে ভুল হবে।

কারা করলো? নাকি অন্য কিছু আছে- তদন্ত হোক

ফায়ার সার্ভিসের সাবেক ডিজি আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ বলেন, এখানে তো বাইরের লোক ছিল না। ওখানে তো শুধু ওখানকারই লোকজন ছিল। এত রাতে আগুন লাগলো। সেখানে তো ফায়ার প্লান্ট থাকার কথা। যে ভবনে আগুন লাগছে সেখানে কারা নিয়োজিত ছিল? ফায়ার সার্ভিসের কারা ছিল। ফায়ারের ইকুইপমেন্ট কাজ করেছে কি-না? এসব বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করতে হবে।

তিনি বলেন, আগে দেখতে হবে সেখানে মানুষ ছিল কি-না? সেখানে মশার কয়েল, রান্না হিটার বা সিগারেট ছিল কিনা? মানুষ না থাকলে এসব থাকার কথা নয়। মানুষ না থাকলে তো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার কথা। সেটা বন্ধ করা না থাকলে ইনটেনশনটা বুঝতে হবে।

রিমোট কন্ট্রোলে আগুন লাগানো হতে পারে

আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ বলেন, আগুন যদি ছয় তলাতে হয়। সেটা কিন্তু রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমেও কোনো কিছু বিস্ফোরণ ঘটিয়ে করা হতে পারে। ড্রোন ব্যবহার কিংবা মানুষ ঢুকছিল কি-না সেটার আলামত খুঁজতে হবে। এটা স্যাবোটাজ না এমন ভাবার কোনো কারণ নেই।

গণপূর্তকে জবাবদিহি করতে হবে

তিনি বলেন, কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেখানে তো পূর্ণাঙ্গ ফায়ার স্টেশনই থাকার কথা। সেখানে লার্ন টেবল লেডার ব্যবহার করার কথা। সেখানে আদৌ সেটা ছিল কিনা? পাম্প ছিল কি-না? এখানে লেডার কেন ঢুকতে পারলো না? আমরা শুনছি, খবর পাচ্ছি, গণপূর্ত সেখানে গেটের উপরে ছাউনি দিয়েছে। সেটা সরানোর জন্য ফায়ার চিঠিও দিয়েছে। অথচ সেই ফায়ারের চিঠিকে কেন আমলে নেয়নি গণপূর্ত সেটাও বিবেচনায় আনতে হবে। আর পানির লেয়ার পর্যাপ্ত ছিল না।

নিমিষেই আগুন ডানে-বামে প্রান্তে চলে যাবার কথা নয়

ফায়ার সার্ভিসের সাবেক এই ডিজি বলেন, যে সব কার্যালয়ে আগুন লেগেছে, সেখানে ডানে-বায়ে কীভাবে ভবনের প্রান্তে চলে যায়? আবার নিচেও আগুন দুই কোনায় পৌঁছে যাওয়া অবিশ্বাস্য। এখানে বারুদের ব্যবহার হতে পারে। সেটা তদন্তে খুঁজতে হবে।

দেরিতে আগুন নির্বাপণের দায় ফায়ার সার্ভিসের দায় : শাকিল নেওয়াজ

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (অপারেশনস) মেজর (অব.) একেএম শাকিল নেওয়াজ বলেন, সচিবালয়ে লাগা আগুন নির্বাপনে ১০ ঘণ্টা সময় নেওয়া অবিশ্বাস্য।

সচিবালয়ে আগুন লাগানো হয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, নাশকতার যথেষ্ট কারণ আছে। যে-সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেশি দুর্নীতির অভিযোগ সে সব জায়গাতে আগুন লাগছে। আরেক ভবনে তো আগুনই লাগেনি।

তিনি বলেন, গতকাল ছুটির দিন ছিল। রাত দেড়টায় আগুন ধরলো। যেখানে বাইরের মানুষের প্রবেশের সুযোগ নেই। এরমধ্যে একটা পক্ষের ৪০ ঘণ্টার আল্টিমেটাম চলছে। কারা আল্টিমেটাম দিয়েছে তাদের ধরতে হবে। মধ্য রাতে লাগা আগুন নেভাতে ১০ ঘণ্টা লাগলো কেন- তাও দেখতে হবে।

ফায়ার সার্ভিসের ব্যর্থতাও তদন্ত করা উচিত

তিনি বলেন, যদি দুর্ঘটনাজনিত আগুন হয় তাহলে একজায়গায় লাগার কথা। একসঙ্গে তিন জায়গায় আগুন লাগার কথা নয়। লাগানো হলেই তিন জায়গায় আগুন জ্বলবে। এখানে তো পুলিশ আনসার বিজিবি ছিল। চারদিকে লাইট বন্ধ ছিল। ফায়ার সার্ভিস কী করলো? তাদের কী দুর্বলতা ছিল? বঙ্গবাজার ১০ গজের ভেতরে সেই আগুনও তারা দ্রুত নেভাতে পারল না। সচিবালয় কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান সেখানেও তারা আগুন নেভাতে পারছেন না। এটা হয় না, মানা যায় না। তাদের ব্যর্থতাকেও তদন্তের বিবেচনায় আনতে হবে।

তদন্ত কমিটিতে অভিজ্ঞ-বিশেষজ্ঞদের রাখা হয়নি

সচিবালয়ে লাগা আগুনের ঘটনায় উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি গঠন নিয়ে সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, এখানে এক্সপার্ট কে? যাদেরকে কমিটিতে রাখা হয়েছে তারা অভিজ্ঞতা ছাড়া কীভাবে আগুনের মোটিভ, স্যাবোটাজ শনাক্ত করবে? ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকা যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ তাদেরকে আবার কমিটিতে রাখা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে র‌্যাব পুলিশের অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের রাখার পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের সাবেক অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞদের রাখতে হবে। তদন্ত কমিটিতে অগ্নিকাণ্ড সংক্রান্ত অভিজ্ঞদের রাখা উচিত ছিল।

প্রসঙ্গত- বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে সচিবালয়ে আগুন নেভানোর সময় ট্রাকচাপায় আহত হন ফায়ার ফাইটার সোয়ানুর জামান নয়ন (২৪)। তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনের স্পেশাল এ ফাইটারকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved সর্বস্বত্বঃ দেশ হাসান
Design & Developed By : JM IT SOLUTION