দুবাইয়ের আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান ওরফে সোহাগ মোল্লা ওরফে রবিউল ইসলাম রবি দেশের ৬৪টি জেলায় ৬৪টি মসজিদ নির্মাণ করার ঘোষনা দিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে আরাভ খান তার ফেসবুক লাইভে এসে এ ঘোষনা দেন। তিনি বলেন, আমি একজন দিনমজুরের ছেলে। আমি ঢাকায় এসে অনেক কষ্ট করেছি। হোটেলে কাজ করেছি। অনেক কষ্ট করে আমি আজ এ অবস্থানে এসেছি। আল্লাহ যদি আমাকে সুস্থ রাখে তাহলে খুব শীঘ্রই দেশের ৬৪টি জেলায় ৬৪টি মসজিদ নির্মাণ করবো।
নিজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলার কথা তুলে ধরে আরাভ খান বলেন, আমার মামলা হয়েছে এ কথা সত্য। তবে আমি কোন হত্যা কান্ডের সাথে জড়িত নয়। পুলিশ আমাকে অস্ত্র মামলায় জেলে দিয়েছে। এ কথা সত্য । তবে আমি দোষী না। আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় জেলে গিয়েছি। আবার জামিনে বেরিয়ে এসেছি। আদালত যদি আমাকে সাজা দেয় তাহলে আমি সে সাজা মাথা পেতে নেব।
তিনি আরো বলেন, অনেক প্রতিকুলতার মধ্য দিয়েও সাকিব আল হাসান ভাই আমার স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করেছেন। এ জন্য আমি সাকিব আল হাসান ভাইর কাছে কৃতজ্ঞ।
নিজের ব্যবসা সম্পর্কে বলতে গিয়ে আরাভ খান বলেন, অনেক কষ্ট করে আমি আমার এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছি। এখানে আমার কিছু ব্যবসায়ীক প্রতিপক্ষ তৈরী হয়েছে। তারাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা রটাচ্ছে। গণমাধ্যমে যেসব খবর আসছে তাহা পুরোপুরি সত্য নয় বলে উল্লেখ করেছেন এই আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী ।
এর আগে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান দুবাইয়ের হিন্দ প্লাজায় আরাভ জুয়েলারি নামে এই স্বর্ণের দোকানটি উদ্বোধন করেন। দোকানটির মালিক কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়নের আশুতিয়া গ্রামের আরাভ খান বলে জানাগেছে। তবে তার প্রকৃত নাম সোহাগ মোল্লা বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।
সোহাগ মোল্লা আশুতিয়া গ্রামের দিনমজুর মতিয়ার রহমান মোল্লার ছেলে। মতিয়ার রহমান মোল্লা এক সময় বাগেরহাট জেলার চিতলমারি উপজেলায় ফেরি করে সিলভারের হাড়ি পাতিল বিক্রি করতেন। এখানেই ১৯৮৮ সালে সোহাগ মোল্লার জন্ম হয়। ২০০৫ সালে চিতলমারি সদরের একটি বিদ্যালয় থেকে সোহাগ মোল্লা এসএসসি পাশ করে। দারিদ্রতার কারণে এরপরে আর তার লেখাপড়া হয়নি। চিতলমারি থেকে ২০০৮সালে ভাগ্যের অন্বেষণে সে ঢাকা চলে যায়। ঢাকা গিয়ে নাম পরিবর্তন করে হয়ে যায় মোল্লা আপন। জড়িয়ে পরে অপরাধ জগতে। ঢাকায় পুলিশ হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের কারণে ঢাকার বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে প্রায় ডজন খানেক মামলা হয়। এরপর পুলিশের হাত থেকে বঁাচতে সোহাগ মোল্লা ওরফে মোল্লা আপন, ওরফে রবিউল ইসলাম রবি, ওরফে শেখ হৃদি, ওরফে আরাভ খান ভারতে কোলকাতায়া পালিয়ে যায়। সেখান থেকে আরাভ খান চলে যায় দুবাইয়ে।
এদিকে আরাভ খানের দুবাইয়ে এই স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনের খবর জানাজানি হলে এলাকায় আলোচনায় ঝড় ওঠে। সকলের মুখে মুখে একই প্রশ্ন সোহাগ মোল্লা কিভাবে রাতারাতি এতো টাকার মালিক বনে গেলেন।
সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খানের চাচাতো ভাই ফেরদৌস মোল্লার সাথে। তিনিও সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খান অল্প দিনে এতো টাকার মালিক হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। গত কয়েকদিন আগে সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খান তার দুই বোন ও মা বাবাকে দুবাই নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তার চাচাতো ভাই ফেরদৌস মোল্লা।
হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজাহারুল আলম পান্না বলেন, সোহাগ মোল্লা ওরফে আরাভ খান একই ব্যক্তি। আমার গ্রামেই তার বাড়ি। সে একটি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। গত পাঁচ সাত বছর ধরে সে এলাকায় আসেনা। হঠাৎ করে সে কিভাবে এতো টাকার মালিক হলো এটা আমাদের বোধগম্য নহে।
কোটালীপাড়া থানার ওসি মোঃ জিল্লুর রহমান বলেন, সোহাগ মোল্লা ওরফে মোল্লা আপন, ওরফে রবিউল ইসলাম রবি, ওরফে শেখ হৃদি, ওরফে আরাভ খানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৯টি ওয়ারেন্ট আমায় থানায় এসেছে। আমি ওয়ারেন্টগুলো তামিল করার জন্য চেষ্ঠা করেছি। কিন্তু তার কোন হদিস আমরা পাইনি। #