বাগেরহাটের কচুয়ায় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোয় দীর্ঘ ৩ মাসের বেশি সময় ধরে প্যারাসিটেমল ছাড়া নেই কোন ধরনের ঔষুধ। ফলে সেবা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা পড়েছে চরম বিপাকে।এ বিষয়ে কচুয়া উপজেলার মঘিয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও রাড়ীপাড়া ইউনিয়নের গোয়ালমাঠ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে সেবা নিতে আসা রোগীরা পাচ্ছে না কোন ধরনের ঔষধ, ফলে লিখিত ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে ওষুধ সংগ্রহ করছে তারা। এতে করে সরকারের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ রোগীরা। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষেরা অর্থনৈতিকভাবে চরম বিপদে পড়ছে । এ বিষয়ে মঘিয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মোঃ কারুজ্জামান মুকুল বলেন, বেশ কয়েক মাস ধরে আমাদের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোয় প্রায় সব ধরনের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে করে বর্তমানে আমরা প্যারাসিটেমল ছাড়া কোনো ধরনের ওষুধ রোগীদের মাঝে সরবরাহ করতে পারছিনা। এ বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারেন। এছাড়াও উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে ওষুধ সরবরাহ ছাড়াাও রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। কিছুদিন পূর্বে সংস্কার করলেও তা আবার লবন ধরেছে। নেই চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মতো প্রেেয়াজনীয় আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি।
শুধু উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রই নয় ২০২০ সালে ৫০শয্যা বিশিষ্ট কচুয়া হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডটি পরিত্যাক্ত ঘোষনা করলেও সেখোনে আজও কোন নতুন ভবন নির্মিত হয়নি। পুরুষ ওয়ার্ডটি পরিত্যাক্ত ঘোষনা করে তালা দিয়ে রাখার কারনে পুরূষ রোগীদের অন্যত্র নিয়ে নিয়ে সেবা দেওয়া হচ্ছে। এই ঘোষিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির পরিত্যাক্ত ভাঙ্গা জরাজীর্ণ ভবনের নিচ তলায় দীর্ঘদিন থেকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের সেবা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি ভবনটির কিছু অংশ ভেঙ্গে এক গর্ভবতী মায়ের মাথায় পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বিল্ডিং অভাবে পুরুষ ওয়ার্ডটিও যা বিভিন্ন সময় সংবাদের শিরোনাম হয়েছে কিন্তু পরিবর্তন হয়নি অবস্থার। এ বিষয়ে প্রতিবারই কর্তৃপক্ষ বলছে, ভবনের সমস্যার বিষয়াদি নিয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশলী বিভাগে একাধিকবার চিঠি দিয়েছেন তারা কিন্তু এখনো কোন আলোর মুখ দেখা যায়নি।
এছাড়াও লক্ষাধিক লোকের জন্য ৫০ শয্যা বিশিষ্ট কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটিতে বর্তমানে ২৯ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৯ জন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটিতে ডাক্তার সহ বিভিন্ন বিভাগে ৬০ এর অধিক জনবল সংকট নিয়ে চলছে আগের অবস্থায়। হাসপাতালে কোনো মেডিকেল টেকনোলজিস্ট না থাকায় রোগীদেও কোন ধরনের ল্যাব টেস্ট হচ্ছে না। নেই কোনো আধুনিক এক্স-রে মেশিন। যাতে করে সহজেই অনুমান করা যায় এখানে এখনো কোন দৃশ্যমান পরিবর্তন আসেনি। বরং বর্তমানে দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যেও অনেকে বিভিন্ন কারণবশত প্রায়শই থাকেন অনুপস্থিত।
এছাড়াও কচুয়া মা ও শিশু স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা সদর ক্লিনিকের পরিবার কল্যান পরিদর্শক বিজলী রানী মৈত্রের বিরুদ্ধে সেবা নিতে আসা অনেকের কাছ থেকে নিয়ম বহির্ভূত টাকা নেওয়ার অভিযোগ আছে। যদিও এ বিষয়ে জানতে চাইলে তার বিরুদ্ধে করা এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবী করেন।আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আর.এম.ও) ডাঃ মনিসংকর পাইক এ বিষয়ে মুঠো ফোনে বলেন, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোতে সাধারণত বছরে ১ বার ঔষধ পাই। এদিকে যদি প্রতিদিন সেখানে রোগী আসে এ ক্ষেত্রে তো আমরা কিছু করতে পারিনা, তাদের আবার কম বেশি ঔষধ দেওয়া লাগে। তাছাড়া নিয়মিত সেবা নিতে আসা রোগীরা সাধারণত জানে শেষ দিকে ঔষধ কম পাওয়া যায়, তাই এসব রোগীরা আগে ভাগেই ঔষধ নিয়ে যায়, ফলে শেষ দিকে সংকট দেখা যায়। তিনি আরো বলেন,বর্তমানে ঔষধ নেই, জুনের আগে আর পাওয়া যাচ্ছে না। কারন টার্গেটের যে ঔষধ তারা তা আগেই নিয়ে গেছেন,টার্গেট এর বেশী ঔষধ দেওয়ার সুযোগ নেই। জুন মাসের দিকে আমাদের সবখানেই ঔষধের কিছু ঘাটতি থাকে। তবে এবছর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ছাড়া অন্য জায়গায় তেমন ঔষধের সংকট নেই বলেও তিনি জানান।