তানিয়া তাবাসসুম,খুবি প্রতিনিধি
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) প্রতিষ্ঠার ৩৪ বছর অতিক্রম হলেও নিরসন হয়নি আবাসন সংকট। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিগত প্রত্যেক প্রশাসন আশ্বাস দিলেও এ সংকট কোনোভাবেই নিরসন হচ্ছে না।
ফলে, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থীরাই সবথেকে বেশি অসুবিধায় পতিত হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭ হাজারের বেশি। কিন্তু সে তুলনায় হল রয়েছে মাত্র পাঁচটি। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর তুলনায় হলের সংখ্যা কম হওয়ায়, আবাসন সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট পাঁচটি হলে থাকছেন ২ হাজার ৪৭০ জন শিক্ষার্থী।
প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়টিতে যে সংখ্যক নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়, তার তুলনায় আবাসন ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত। সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে এর ভৌতসমস্যাও। শিক্ষার্থী ভর্তির সঙ্গে তাদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না করায় আবাসন সংকট পৌঁছেছে চরমে। আবাসন সুবিধা পান মাত্র ৩০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী। যার অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থীকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে ভাড়া বাড়ি ও মেসে থাকতে হয়। যার কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচের বাইরেও গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবাসন সংকটের কারণে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী মেস কিংবা বাসা ভাড়া করে থাকছেন।
এরকম ১০-১৫টি ছাত্রাবাসে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ৪-৫ বছর আগে এখানে দুই হাজার টাকায় ছোট যেসব কক্ষ পাওয়া যেত, বছরের ব্যবধানে সেসব কক্ষের ভাড়া এখন ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা। এই সংকট কাজে লাগিয়ে ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকাগুলোতে গড়ে উঠেছে মেস ও ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়ার রমরমা ব্যবসা। এসব মেস ও বাসায় প্রতিনিয়ত লোডশেডিং, বিশুদ্ধ পানির সংকট, স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় অসহায় জীবন যাপন করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে আসনসংখ্যা ৫৭৬।
হলটিতে ১৯ জন বিদেশি শিক্ষার্থী থাকেন। হলের ক্যানটিনের খাবারের মান নিয়ে পূর্বে তেমন কোনো অভিযোগ না থাকলেও বর্তমানে খাবার মান নিয়ে নানান অভিযোগ এবং সিট পেতেও দৌড়ঝাঁপ করতে হয় বলে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জিহাদ বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে আর্থিক সমস্যায় পড়তে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার আশ্বাস দিয়েও এ সমস্যা নিরসনে কাজ করছে না। এসব আর্থিক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আমাদের দিনভর টিউশন করাতে হয়, যারফলে অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে পাশাপাশি নানান দুশ্চিন্তায় পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে। প্রশাসনের প্রতি শিক্ষার্থীদের একটাই দাবি অতিদ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা বাড়িয়ে নতুন হল তৈরি করে এ সমস্যা নিরসনে পদক্ষেপ নিবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।” বিশ্ববিদ্যালয়ের খানজাহান আলী হলে ৪০৪ জন আবাসিক শিক্ষার্থী থাকেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এই হলের ক্যানটিনের খাবারের মান সন্তোষজনক নয়। ক্যান্টিন মালিকের কাছে বারবর অভিযোগ দিলেও এর কোনো সমাধান হয়নি বলে জানান শিক্ষার্থীরা। খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা হলে মোট আসনসংখ্যা ৩৮৪। স্বল্প আসনের হলগুলোতে রয়েছে নানান সমস্যা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ হলে সহজে সিট পাওয়া যায় না। মেয়েদের অপরাজিতা হলে মোট আসন ৫৭৬টি।
এছাড়া আছে সাতটি গণরুম। এসব রুমের ৪৮টি বেডে বর্তমানে প্রায় ৬৫ জন মেয়েকে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীরা যে কয়জন প্রথম বর্ষেই সিট পান, তাদের ছয় থেকে আট মাস গণরুমে থাকতে হয়। তবে, নতুন প্রশাসন গণরুম নিরসনের কাজ শুরু করেছেন। অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের ভাড়া বাড়ি বা মেসে থেকে আসা-যাওয়া করেন। তাদের অনেকেই বলেছেন, বাড়ি ও মেসের ভাড়া, খাবারের দাম অনেক বেড়ে গেছে। খরচ জোগাতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হয়।
এভাবে চলতে থাকলে কত দিন চালিয়ে যেতে পারবেন তা তারা জানেন না। আবাসনজনিত সমস্যা নিরসনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রতিনিধিকে জানান, ‘শিক্ষার্থীদের আবাসনের সংকট নিরসনের জন্য নতুন হল তৈরি করা হবে। তবে জায়গা সংকটের কারণে নতুন হল তৈরি করা যাচ্ছে না। ক্যাম্পাসের জায়গা বর্ধিত হলে পরবর্তীতে পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে।’