শামীম শেখ, গোয়ালন্দ ( রাজবাড়ী)
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী শান্তি আক্তার (১৩) গলায় ফাঁস নেয়ার ১৪ দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে।
নিহত শান্তি উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ দৌলতদিয়া সৈদাল পাড়ার বাসিন্দা শরিফ মন্ডলের মেয়ে। সে দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের শিক্ষার্থী। তার মৃত্যুতে পরিবারের শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শরিফ মন্ডল ঢাকায় সিএনজি চালায়।
তার মৃত্যু নিয়ে এলাকায় নানা ধরনের আলোচনা চলছে। পরিবারের দাবি সে মায়ের বকুনি খেয়ে অভিমানে গলায় ফাঁস নেয়। তবে তার কয়েকজন সহপাঠী ও প্রতিবেশী জানায়, মামুন নামে স্হানীয় এক যুবক শান্তিকে পছন্দ করত। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে তার সাথে কথা বলত। মাঝেমধ্যে শান্তিদের বাড়ির আশপাশে গিয়েও তার সাথে দেখা করার চেষ্টা করত। শান্তিও মাঝেমধ্যে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ওই ছেলের সাথে দেখা করত। পরিবারের পক্ষ হতে শান্তির চাচাতো ভাই রাজিব মামুনকে এর আগে এ বিষয়ে সতর্ক করে দেয়।
বিষয়টি নিয়ে শান্তির বড় ভাই শান্ত ও তার মা গত ২ মে বকাঝঁকা করলে সে অভিমানে গলায় ফাঁস নেয়।
তবে রবিবার (১৮ মে) দুপরে সরেজমিন আলাপকালে শান্তির বাবা শরিফ মন্ডল জানান,তিন সন্তানের মধ্যে শান্তি দ্বিতীয় ও আমাদের একমাত্র মেয়ে। গত ২ মে শুক্রবার সকাল ৭ টার দিকে সে আমার ছোট ছেলে ৫ বছর বয়সী শাহাদতের সাথে খাবার খাওয়া নিয়ে দুষ্টুমি করছিল। এ সময় তার মা তাকে বকা দেয়া। এতে করে সে অভিমান করে নিজ ঘরে তার থাকার কক্ষে আড়ার সাথে ওড়না পেচিয়ে গলায় ফাঁস নিয়ে ঝুলে পরে।
বিষয়টি শান্তির মা বুঝতে পেরে তাৎক্ষণিক দৌড়ে গিয়ে মেয়েকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নিচে নামায়। পরে বাড়ির অন্যান্য লোকজনের সহযোগিতায় তাকে দ্রুত গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ত্কে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে একদিন চিকিৎসা শেষে তার অবস্থা আরও অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্হানান্তর করে। ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে কয়েকদিন রেখে চিকিৎসা দেয়ার পর তাকে সাধারণ ওয়ার্ডে দেয়া হয়। এর মধ্যে সে আবারো গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে ১৬ মে শুক্রবার বিকেল ৪ টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে।
মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে শাহবাগ থানা পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়ে মৃতদেহ তাদের হেফাজতে নিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্ত করে।
এদিকে শনিবার (১৭ মে) দিনগত রাত ৯ টায় শান্তির লাশ এলাকায় এনে জানাযা শেষে দৌলতদিয়া খানকা পাক কবরস্থান দাফন করা হয়।
দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ সহিদুল ইসলাম বলেন, শান্তির এ অকাল মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক। রবিবার দুপুরে তাদের বাড়িতে গেলে হৃদয় বিদারক পরিবেশ দেখতে পাই। মেয়ের শোকে তার মা অনেকটাই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন।
শান্তির গলায় ফাঁস নেয়ার বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের কথা শোনা যাচ্ছে। কোন ছেলের সাথে তার সম্পর্ক ছিল কিংবা ওই ছেলে তাকে বিরক্ত করত এ ধরনের কথা এখন শোনা গেলেও ইতিপূর্বে শোনেননি। তবে স্কুলের আশপাশে বখাটে ছেলেদের উপদ্রব আছে। এরা মেয়েদের বিরক্ত করে থাকে এটা সত্য।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ হতে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। তবে শাহবাগ থানা মৃত দেহের সুরতহাল প্রস্তুতপূর্বক আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে।