জেলা প্রতিনিধি, পিরোজপুর
পিরোজপুরে নব নির্মিত ২৫০ সজ্জা বিশিষ্ট পিরোজপুর সদর হাসপাতালে লিফটের অভাবে কার্যক্রম শুরু না করার ফলে সৃষ্টি হয়েছে চরম ভোগান্তি।
পিরোজপুর জেলা সদর হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম লিফটের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে, জনগণের মাঝে ব্যাপক হতাশা এবং দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। এখনো সেখানে লাগানো হয়নি লিফট। তাই এক বছরেও হাসপাতালটি চালু করতে পারেনি গণপূর্ত বিভাগ। এ কারণে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলা কয়েক লাখ মানুষ।
জেলা হাসপাতালে ১০০ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি থাকে দুই থেকে তিন গুন বেশি। রোগীরা বেড না পেয়ে মেঝেতে এবং বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। যে কারনে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
পিরোজপুর মহাকুমা থেকে জেলায় উন্নীত হয় ১৯৮৪ সালে। তখন ৩১ শয্যা থেকে হাসপাতালটির যাত্রা শুরু হলেও ১৯৯৭ সালে ৫০ শয্যার নতুন ভবন নির্মিত হয়।২০০৫ সালে এসে সেটি ১০০ শয্যার হাসপাতাল ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
পিরোজপুরে কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এলে অল্প দিনের মধ্যেই বদলী হয়ে অন্যত্র চলে যান। আবার জরুরী বিভাগে রোগী ভর্তি হতে না হতেই তাকে খুলনা-বরিশাল বা ঢাকায় রেফার করে দেওয়া এখানকার অলিখিত নিয়ম। ফলে স্বাভাবিক চিকিৎসা পাওয়া জেলার মানুষদের ভাগ্যে জোটে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন ৫ শতাধিক রোগী এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ২০১৭ সালে হাসপাতালটিকে আড়াইশ’ শয্যায় উন্নিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। টেন্ডার আহবানের পরে শুরু হয় ৭ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ। পরে আরও ২ তলার কাজ সম্প্রসারণ করা হয়। ২০২০ এর জুনে শেষ হবার কথা থাকলেও মহামারি করোনার কারনে ৩ দফা সময় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হয়।
কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ হলেও লিফট না থাকার কারনে হস্তান্তর হচ্ছে না ভবনটি। আর তাই চিকিৎসার দুর্ভোগ লেগেই আছে পিরোজপুরে।
পিরোজপুর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুর্শিদ শেখ বলেন, “জেলা হাসপাতালটি বছরের পর বছর পরে থাকলেও এখনো চালু করতে পারেনি। আমরা রোগী নিয়ে আসলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা পাই না।”
তিনি আরও বলেন, “রোগী নিয়ে আসলেই বরিশাল, খুলনা অথবা ঢাকায় রেফার করা এখানকার নিয়ম। কয়েক মাস আগে আমার মা নিয়ে আসলে সামান্য চিকিৎসা দিয়েই খুলনায় রেফার করা হয়েছিল। আমরা দ্রুত জেলা হাসপাতালটি চালুর দাবি জানাচ্ছি এবং আধুনিক চিকিৎসা পেতে পারি সে ব্যবস্থা জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
এসব বিষয়ে পিরোজপুর গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ফাহিম আহমেদ বলেন, “লিফট ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার কারনে হস্তান্তরে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে আশা করছি শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে। ইতোমধ্যে লিফটের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।”
সিভিল সার্জন ডা. মো. মতিউর রহমান রোগীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বলেন, “ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি রোগী প্রতিনিয়ত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। সাধ্যের মধ্যে সেবার সর্বোচ্চটুকু দিচ্ছেন তারা। ভবনটি দ্রুত হস্তান্তর হলে সেবার মান আরও বাড়বে এবং ভোগান্তিও কমবে।”
প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে মেসার্স খান বিল্ডার্স ও বঙ্গ বিল্ডার্স লিমিটেড নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করেছে। এটি চালু হলে পিরোজপুরসহ আশপাশের দুটি জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ আধুনিক চিকিৎসাসেবার আওতায় আসবে।