সবিতা রায়, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
আজ ১৭ জানুয়ারী বাঙালীর নস্টালজিয়া সূচিত্রা সেনের ৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা করুনাময় দাশগুপ্ত,মা ইন্দিরা দেবী। সূচিত্রা সেন ছিলেন পরিবারের পঞ্চম সন্তান তৃতীয় কন্যা। ডাক নাম রমা দাশগুপ্ত। পাবনার আলো বাতাসের নৈস্বর্গিক আবহে বেড়ে উঠেছেন তিনি,লেখাপড়া করেছেন পাবনাতেই। কবি রজনী কান্ত সেনের নাতনী ছিলেন তিনি।
১৯৪৭ সালে শিল্পপতি আদিনাথ সেনের পুত্র দিবানাথ সেনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন বাঙালীর রোমান্স সূচিত্রা সেন। অভিনেত্রী মুনমুন সেন তার কন্যা। ১৯৫২ সালে রমাদাশ গুপ্ত সিনেমায় এসে হলেন সূচিত্রা সেন। ‘শেষ কোথায়’ তাঁর প্রথম ছবি। ১৯৫৩ সালে কিংবদন্তী মহানায়ক উত্তম কুমারের বিপরীতে ‘সাড়ে ছিয়াত্তর ‘ ছবিতে অভিনয় করে সাড়া জাগিয়ে তোলেন দুই বাংলার ভক্তদের মনে। তার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি সবার প্রিয় মহানায়িকা সূচিত্রা সেনকে। একের পর এক ডাক আসে সিনেমায়।
মহানায়ক উত্তম কুমারের সাথেই তাঁর অভিনয় শৈলি নান্দনিকতা পেত সব সময়, তাইতো উত্তম সুচিত্রা জুটিকে বলে হতো ‘সিলভার জুটি’। তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমা ‘সাত পাকে বাধা’ মেজ বোউ, শাপমোচন,সাগরিকা,গৃহদাহ,দেবদাস,ইত্যাদি দর্শক শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায় এখনো। ১৯৫২- ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি মোট ৬০ টি ছবিতে অভিনয় করেছেন এই সদা হাস্যময়ী বঙ্গললোনা। রূপালী পর্দার আড়ালে সূচিত্রা সেন ও উত্তম কুমারের প্রেম ছিল এক অজানা রহস্য, যেন আলো আঁধারী খেলার মতো। যা সবার মনে সাড়া দিয়ে যায় এখনো। সূচিত্রা সেনের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৬৩ সালে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁকে সেরা অভিনেত্রীর পুরষ্কার দেয়া হয়,তিনিই প্রথম বাঙালী নারী এই পুরষ্কারের স্থানে। ১৯৭২ সালে পদ্মশ্রী, ১৯৭৬ সালে ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার দেয়া হয় সেরা অভিনয়ের জন্য। এ ছাড়াও ২০১২ সালে তিনি ‘ বঙ্গবিভূষন’ পুরষ্কার লাভ করেন। ১৯৮০ সালে ২৪ জুলাই মহানায়ক উত্তম কুমারের মৃত্যুর খবরে সূচিত্রা সেন শহরের নিরবতা ভেঙে হাজির হন ভবানীপুর, শেষ বিদায় জানালেন গলায় মালা পড়িয়ে। তার পর থেকেই তিনি আবার লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান।
২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারী বেলভিউ হাসপাতালে সবাইকে অশ্রুশিক্ত করে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাঁকা ঠোঁটের হাসিতে, রোমান্টিক চাহনিতে কত তরুনের যে হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিয়েছেন ছিপছিপে চেহারার আকর্ষনীয় সূচিত্রা সেন,তার হিসেব মেলা ভার। সূচিত্রা সেন এখনো সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায় ফাগুন বাতাসের মতো।
নবধারা পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর মৃত্যুদিনে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নবধারা/বিএস