রাকিব চৌধুরী,স্টাফ রিপোর্টার
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার মাঠে মাঠে বোরো ধানের শিষ বের হতে শুরু করেছে। কিন্তু এর মধ্যেই ধানখেতে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন অনেক চাষি।
স্থানীয় কৃষকরা বলেন, বোরো ধানের এ সময়ে এসে নানা পোকার আক্রমনে ভরপুর ছিল। অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করে কিছুটা কমেছে। এরপর শুরু হয়েছে ইঁদুরের অত্যাচার। ক্ষেতে বিভিন্ন পদ্ধতিতে বিষমাখা টোপ, আতপ চালের টোপ কিংবা ফাঁদ পেতেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। ক্ষেত থেকে ইঁদুর দূর করতে না পেরে অসহায় হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৮ হাজার ৬’শত হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। যেসব এলাকার জমি নিচু, সেখানে ইঁদুরের আক্রমণ বেশি হচ্ছে। ইদানীং ইঁদুরের উপদ্রব তুলনামূলকভাবে বেড়ে গেছে। টুঙ্গিপাড়ার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের পাকুড়তিয়া বিল গিমাডাঙ্গার বিল,গোপালপুর বিলসহ কয়েকটি বিলে ইঁদুরের আক্রমনে সবচেয়ে বেশি ধান খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের পাকুড়তিয়া বিলে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইদুরে ধানের বিপুল ক্ষতিসাধন করেছে, ধানের চারা নিচ দিয়ে খেয়ে ফেলে রেখে গেছে।চাষিরা ইঁদুরের উপদ্রব থেকে ধান রক্ষা করতে ক্ষেতের মধ্যে বাঁশের কঞ্চি গেড়ে তাতে পলিথিন টাঙিয়ে দিয়েছেন। অনেকে আবার ক্ষেতের চারপাশে ইঁদুর মারার ফাঁদ তৈরি করে রেখেছেন। কেউ কেউ খাবারে বিষ মিশিয়ে খেতের চারপাশে রেখে দিয়েছেন ইঁদুর মারার জন্য।
টুঙ্গিপাড়ার পাকুড়তিয়া গ্রামের চাষি মিলু মুন্সী কাঁদতে কাঁদতে জানান, আমি চার বিঘা জমি লাগিয়েছি, গত বছর ৪০ থেকে ৫০ মন ধান পেয়েছি। আমার সেই জমিতে এবার ২০ মণ ধানও হবেনা এবং অন্য যেখানে জমি রয়েছে সেখানেও একই অবস্থা, জমি লাগাতে যে টাকা খরচ করছি সে টাকা এ বছর পাব না। সরকারের কাছে অনুরোধ আমরা এখন কৃষকরা কিভাবে বাঁচতে পারি সেই ব্যবস্থা করে দিবেন।
অন্য চাষী আতিউর রহমান মোল্লা জানান, এখন ধানের শিষ বের হচ্ছে। এ অবস্থায় ক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দেওয়ায় তিনি দুশ্চিন্তয় আছেন। ওষুধ ছিটিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না।পাকুরতিয়া বিলের মতন অন্য বিলে একই সমস্যা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম জানান, বর্তমানে আমাদের টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় বোরো ধানের চাষাবাদ হচ্ছে। আমরা কৃষকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে ইঁদুর প্রাদুর্ভাব্যের বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা মাঠ পর্যায়ে ভিজিট করেছি এবং আমাদের উপসহকারী গন তারা মাঠ পর্যায়ে রয়েছেন । এরকম অবস্থায় আমরা ঊর্ধ্বতন ও কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, সেখান থেকে যে মেসেজটা পেয়েছি আগামী ৩০ শে চৈত্র পর্যন্ত জমির প্রত্যেকটি ইঁদুর প্রতি ১০ টাকা করে দেওয়া হবে। আমাদের যে এসওপিপিও রয়েছেন তিনি রেজিস্টার মেইনটেইন করবেন। ইঁদুর নিয়ে আসলে এটা ডিসপজল করে আমরা ৩০ শে চৈত্রের পরে যে প্রাপ্য টাকা তাদেরকে বুঝিয়ে দেব।
এছাড়াও তিনি আরো বলেন, আমরা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে এলাকায় এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেছি উঠান বৈঠকের মাধ্যমে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমরা এই মেসেজটা পৌঁছে দিচ্ছি যে কিভাবে ইঁদুর নিধন করতে হবে।