বাগেরহাটের মোল্লাহাটে অনাবৃষ্টি ও খরায় সাদা সোনাখ্যাত চিংড়ি চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। উপজেলার চুনখোলা, গাংনী, কুলিয়া ইউনিয়নের সাত হাজারেরও বেশি মাছের ঘেরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় মৌসুমের শুরুতেই লোকসানের মুখে পড়েছে চিংড়ি চাষীরা। ঘেরে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় মারা যেতে শুরু করেছে মাছ। এতে চিংড়ি শিল্পের উপর বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এবারের মতো খরা ও অনাবৃষ্টি দেখেনি এখানকার কৃষকরা। যার বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে চিংড়ি উৎপাদনে।
এ উপজেলায় সাধারনত ধান এবং চিংড়ি মাছ একই সাথে চাষাবাদ করা হয়। শীতকালে ধান রোপনোর সময় ঘেরের পানি কমিয়ে ক্যানেলে নামিয়ে রাখা হয়। কিন্তু চলমান অনাবৃষ্টি ও খড়ায় ক্যানেলের পানি শুকিয়ে গেছে। এতে ক্যানেলে মাছের ঘনত্ব বেড়ে যাচ্ছে। ফলে তাপমাত্রার বৃদ্ধির কারনে ক্যানেলের পানিতে অক্সিজেনের পরিমান কমে যাচ্ছে। এতে চিংড়ি মাছসহ অন্যান্য মাছ মারা যাচ্ছে।
উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে- এ উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ১৪ হাজারের বেশি চিংড়ি ঘের রয়েছে। বাগদা চিংড়ির চাষ হয় ৪০৯৩ হেক্টর জমিতে এবং গলদা চিংড়ি চাষ হয় ৫৩১.৮৪ হেক্টর জমিতে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এ উপজেলায় গলদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ২২৬১ মেট্রিক টন এবং বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ২৮৬ মেট্রিক টন ।কিন্তু এবছর পানির অভাবে চিংড়ি উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় চাষীরা। একই সাথে এ লোকসান কিভাবে পোষাবেন তা নিয়ে তারা আছেন দুশ্চিন্তায়।
উপজেলার দারিয়ালা গ্রামের মৎস্য চাষী মোল্লা জসিম উদ্দিন জানান, আমি ধান বিক্রি করে এবং লোন নিয়ে ৫০ হাজার রেনু পোনা ঘেরে ছেড়েছি। চলমান আবহাওয়ার কারণে আমার পুরাতন এবং নতুন সব মাছ মারা গেছে আমি একটি মাছ ও বিক্রি করতে পারি নাই। এখন সরকারিভাবে যদি সহযোগীতা করেলে তাহলে ঘুরে দাড়াতে পারবো।
উপজেলার কুলিয়া গ্রামের মৎস্য চাষী লিটন শেখ জানান, আমি আমার আড়াই বিঘা জমিতে ১২ হাজার চিংড়ি পোনা ছেড়েছি। কিন্তু প্রচন্ড রোদের তাপে সব মাছ মরে গেছে। আমার নতুন করে আর মাছ ছাড়ার কায়দা নেই। আমি এখন পুরো সর্বশান্ত।
উপজেলার বেদবাড়িয়া গ্রামের মৎস্য চাষী কিবরিয়া শেখ বলেন, বিগত ৪০ বছরেও এত রোদ দেখিনি। এখন ভাদ্র মাস চলে ঘেরে মাজা পর্যন্ত পানি থাকার কথা। সেখানে শিশুরা ঘেরের মধ্যে খেলাধুলা করছে। এঅবস্থায় মৎস্য চাষ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
মোল্লাহাট উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম নবধারা কে বলেন, বর্তমানে অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে মৎস্য চাষীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। অত্র মোল্লাহাটে ১৪ হাজারের বেশী বাগদা ও গলদা চিংড়ি ঘের রয়েছে। এর মধ্যে ৭ হাজারের বেশী ঘের পানি শূন্য অবস্থায় রয়েছে। এর ফলে মাছ এবং চিংড়ির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে । এ অবস্থায় আমরা চাষীদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। চলমান মৌসুম শেষে ক্ষতিগ্রস্থ চাষীদের তালিকা করে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকের কাছে পাঠাবো। পরবর্তী সিদ্ধান্তের আলোকে তাদের যদি সাহায্য সহযোগী করা যায় তাহলে আমরা সেই ব্যবস্থা করবো।