মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করলে মফস্বলে থেকেও প্রথম হয়ে বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া যায় তার উজ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মো. জিলহাজ শেখ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ‘সি’ ইউনিটের মানবিক বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন গোপালগঞ্জের এই শিক্ষার্থী। ভর্তি পরীক্ষার নৈর্ব্যক্তিক ও লিখিত ১০০ নম্বরের মধ্যে তিনি পেয়েছেন ৭৯.২৫ নম্বর। তার এই কৃতিত্বে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সহপাঠীদের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা।
জিলহাজের বাড়ি গোপালগঞ্জ শহরতলীর পুরাতন মানিকদাহ গ্রাম। তার বাবার নাম শহর আলী শেখ। পেশায় ব্যবসায়ী। মা শিরীন আক্তর গৃহিনী। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে জিলহাজ তৃতীয়।শুক্রবার (৯ জুন) পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরাতন মানিকদাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাইমারি পড়া শেষ করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে জিলহাজ ভর্তি হন জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী এস এম মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ৪.৮৩ পয়েন্ট নিয়ে এসএসসি পাস করেন তিনি। পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য শহরের হাজী লাল মিয়া সিটি কলেজে ভর্তি হন। এ কলেজের মানবিক শাখা থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে কৃর্তিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন জিলহাজ।
জিলহাজ বলেন, পরিবারের সবার আস্থা আমাকে শক্তি যুগিয়েছে। এই শক্তিই কাজে লাগিয়ে আমি ভাল ফলাফল করেছি। কলেজে উঠেই আমার স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবো। তবে এসএসসিতে ৪.৮৩ পেয়ে আপসেট ছিলাম। এরপরই ভালভাবে পড়াশোনা করি। সেখান থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাই। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতির জন্য গোপালগঞ্জের স্থানীয় কোচিং সাব্বির রহমানের পরিচালিত ‘অপটিমাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং’ সেন্টারে ভর্তি হই। এখানের শিক্ষক মন্ডলী আমাকে সর্বোচ্চ সাহায্য করে।
অপটিমাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ের পরিচালক সাব্বির রহমান বলেন, আমি সবসময় চেয়েছি গোপালগঞ্জ সহ আশেপাশের জেলার শিক্ষার্থীরা কষ্ট করে ঢাকা গিয়ে কোচিং করে কিন্তু আশানুরূপ ফলাফল অর্জন করতে পারেনা। অনেক গরীব মধ্যে বিত্ত পরিবারের এ ব্যয় ভার বহন করা অসম্ভব হয়ে পরে। কোচিং জগতের এটি শ্রেষ্ঠ ফলাফল। এখন আশাবাদী কেউ ঢাকা গিয়ে কোচিং করবে না। কারণ, শিক্ষার্থীরা ভরসা জায়গায় পেয়েছে। যেটা গোপালগঞ্জের মানুষের কাছে স্বপ্ন ছিলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১ম। এটা স্বপ্ন দেখার মতো রেজাল্ট। যেটা আমরা পেয়েছি।
বাবা শহর আলী শেখ বলেন, ছোট বেলা থেকে পড়ালেখার প্রতি জিলহাজের আগ্রহ ছিল। কখনো ধমক দিয়ে ওকে পড়তে বসাতে হয়নি। আমার ছেলের রেজান্টে আমি খুব খুশি। এখন উচ্চ শিক্ষা শেষ করে পছন্দ মত পেশা বেছে নিয়ে সবার জন্য কাজ করবে এমনটাই আশা করছি।
হাজী লাল মিয়া সিটি কলেজের অধ্যক্ষ পলাশ কুমার বিশ্বাস বলেন, নিয়ম ও নৈতিকতার মাধ্যমে লেখাপড়া করলে সাফল্য পাওয়া সম্ভব তার উজ্জ্বল দৃস্টান্ত জিলহাজ শেখ। কলেজর পড়ার সময় ওর মেধা, ইচ্ছা শক্তি ছিল প্রবল। আমরা শিক্ষকরা ওকে সব সময় গাইড করেছি। পরীক্ষায় সে ভাল ফলাফল করেছে। ওর এই ফলাফলে আমরা শিক্ষকরা খুবই আনন্দিত।