নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নড়াগাতীতে দেবদুন বাবুল জান্নাত দাখিল মাদ্রাসার ৪ তলা ভবন নির্মানে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় সভাপতি নাজমুল হাসানকে হত্যার হুমকি দিয়েছে গোপালগঞ্জের রিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক ঠিকাদার কামাল মোল্যা। সময় ক্ষেপন ও নিম্নমানের নির্মান সামগ্রী দিয়ে কাজ করতে নিষেধ করায় ৬ নভেম্বর বিকেলে ফোনে তাকে এ হুমকি দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় ওই দিনই বিষয়টি নড়াগাতী থানা, ইউএনও কালিয়া ও জেলা ইঞ্জিনিয়ার (এক্সএন) কে অবহিত করেছেন তিনি। এছাড়া কাজের অনিয়ম নিয়ে কথা বলায় ওই মাদ্রাসার একজন হিন্দু শিক্ষককেও অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিয়ে দেখে নেওয়ায় হুমকি দিয়েছে ওই ঠিকাদার বলে জানা গেছে। ৭ নভেম্বর (সোমবার) সরেজমিনে গেলে মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয়রা বিষয়টি তুলে ধরেন।
তারা জানান, এই ভবন হবে ঝুঁকিপূর্ণ, অঘটন ঘটলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দ্বায়ভার কে নেবে? তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সিডিউল অনুযায়ী ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা। মালামাল চুরি বা চাঁদাবাজির বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা। গোপালগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিফাত এন্টারপ্রাইজ ২০২০ সালের গোড়ার দিকে বাবুল জান্নাত দাখিল মাদ্রাসার ৪ তলা ভবন নির্মানের কাজ শুরু করে। সিডউল অনুযায়ী ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও ওই সময় ভবনের পাইলিং এর কাজ সম্পন্ন করে। ফান্ডে টাকার স্বল্পতা ও করোনার দোহাই দিয়ে কাজ বন্ধ রাখে দীর্ঘদিন। কার্য ক্ষমতা লোপ পাওয়া মরিচা পড়া রড ও পরিত্যাক্ত ভবনের ইটের শুড়কি দিয়ে ঢালাই দিলে ওই ভবন হবে ঝুকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন স্থানীয়রা।
মাদ্রাসার সুপার মোঃ রকিবুল ইসলাম বলেন, সভাপতিকে গালাগাল ও হত্যার হুমকি দেওয়ায় ৭ নভেম্বর ম্যানেজিং কমিটি ও স্থানীয় গন্যমান্যদের নিয়ে মিটিং চলাকালীন ঠিকাদার কামাল মোল্যা তার লোকজন নিয়ে বিনা দাওয়াতে ঢুকে পড়লে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।
মাদ্রাসার সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, মাদ্রাসার পরিত্যক্ত ভবন ওই ঠিকাদার কিনে নিয়ে ওই নষ্ট ইটের শুড়কি নীচেয় দিয়ে ওপরে কিছু ভালো শুড়কি দিয়ে ভবনটিকে ঝুকিপূর্ন করে তুলেছে। ভাল খোয়া দিয়ে কাজ করতে বলায় আমাকে ফোনে মা-বাপ তুলে গালি ও হত্যার হুমকি দিয়েছে ঠিকাদার কামল মোল্যা ও তার সহযোগী শহিদুল। এ বিষয়ে কথা বলতে মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটি ও স্থাণীয় গন্যমান্যদের নিয়ে মাদ্রাসার কক্ষে মিটিং করার সময় ওই ঠিকাদার দলবলসহ বিনা দাওয়াতে প্রবেশ করায় স্থাণীয়রা ক্ষিপ্ত হলে কথা কাটাকাটি হয়। অতঃপর প্রশাসন নিরাপত্তার স্বার্থে সকলকে স্থান ত্যাগ করতে বলেন। কামাল মোল্যা মিথ্যাচার করে বলছে আমি চাঁদা চেয়েছি ও মোটরসাইকেল ভেঙেছি। ওই ঠিকাদারের অনিয়মের কারণে আগেও কয়েকবার অভিযোগ দিয়েছি। সংশ্লিষ্টরা আসলে তাদের সাথেও বেয়াদবি করে। সাময়িক ঠিকমত করলেও চলে গেলে আবার যা তাই। এই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতার ছেলে হিসেবে আমি চাইব সিডিউল অনুযায়ী কাজটি হোক।
অভিযুক্ত ঠিকাদার কামাল মোল্যা পাল্টা অভিযোগে বলেন, সভাপতিকে তিন লক্ষ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় কাজে বাঁধা সৃষ্টি ও লেবারদের গালাগালি করে। এ বিষয়ে জানতে কাজের সাইডে আসলে তার লোকজন আমার মোটরসাইকেলটি ভেঙে দিয়েছে। বিষয়টি তিনি নড়াগাতী থানা ও এক্সএনকে অবহিত করেছেন বলে জানান।
জেলা সাব এ্যাসিষ্টান্ট ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসানকে জানালে তিনি বলেন, শিঘ্রই তিনি সরেজমিনে এসে বিষয়টি দেখবেন। নিম্নমানের সামগ্রীর দিয়ে কাজ করতে দেওয়া হবেনা। ভাল মানের নির্মান সামগ্রী না দিলে ঢালাই বন্ধ রাখা হবে।
উল্লেখ্য যে, কালিয়া উপজেলার দেবদুন গ্রামের কাজী লেয়াকত হোসেন ইসলামী শিক্ষার প্রসারে নিজ অর্থায়নে ২ একর ১৩ জমির ওপর ১৯৯২ সালে দেবদুন বাবুল জান্নাত দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ৪ তলা ভবন নির্মানের অনুমোদন হয় এবং ফ্যাসেলিটিজ ডিপার্টমেন্ট দায়িত্ব নেয়। টেন্ডারের মাধ্যমে খুলনার একটি স্বনামধন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি পায় এবং পরবর্তীতে গোপালগঞ্জের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রিফাত এন্টারপ্রাইজের সাব ঠিকাদার মোল্যা কামাল হোসেন চুক্তির মাধ্যমে ৩ কোটি ৫৬ লক্ষ ৭শত ৮১ টাকার কাজটি হাতিয়ে নিয়ে ২০২০ সালের গোড়ার দিকে কাজটি শুরু করেন। সিডউল অনুযায়ী ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কাজ সম্পন্নের নির্দেশনা থাকলেও এ পর্যন্ত ২ তলার ছাদ সম্পন্ন হয়েছে।