কবি কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ কবিতাটি আজকাল শিক্ষকের সম্মানের বিষয়ে এখন রূপকথামাত্র। আগে বলা হতো শিক্ষক সেবিলে উন্নতি হয়, আর এখন শিক্ষক ছেঁচিলে উন্নতি হয়। হামেশাই শিক্ষকরা মানসিকভাবে লাঞ্ছিত হন। বাদশাহ আলমগীরের ক্ষমতাধর ছেলে শিক্ষকের পা ধুয়ে দিয়েছিলেন, এখন পুরো গা ধুয়ে দিচ্ছে। পাঁজাকোলো করে পুকুরে ফেলে দিচ্ছে।বলা হয়ে থাকে শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষক হলো মেরুদণ্ড সচল-সুস্থ রাখার তথা মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষকরা জ্ঞানের আলো দ্বারা যুগের সব অন্ধকার দূর করে মানুষের জন্য সভ্য, সুন্দর এক জাতি সৃষ্টি করেন। ভবিষ্যৎ জাতির যারা কর্ণধর হবেন মূলত শিক্ষার্থীবৃন্দ তাদের অগ্রগতি ও নৈতিক বিকাশ অব্যাহত রাখতে সমাজে শিক্ষকের গুরুত্ব অপরিসীম।
সঠিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিক্ষকরা মানুষের ভেতর সত্যিকারের মানুষ সৃজন করেন। তাই শিক্ষককে বলা হয় সন্তানের দ্বিতীয় জন্মদাতা। সত্যি তো, জন্মদাতা পিতা শুধু জন্ম দিয়েই থাকেন; কিন্তু তাকে সত্যিকার মানুষরূপে গড়ে তোলেন তার শিক্ষক। জ্ঞান বা বিদ্যার্জনের জন্য শিক্ষকদের ভূমিকাকে দ্বিতীয় জন্মদাতার সঙ্গে তুলনা করে শাহ মুহম্মদ সগীর কবিতার ছন্দে লিখেছেন,‘ওস্তাদে প্রণাম করো পিতা হন্তে বাড়,দোসর জনম দিলা তিঁহ সে আহ্মার।’কবিতা তো কবিতার জায়গায় রয়ে গেল, শিক্ষক সমাজের পরিবর্তন আজও তো দেখতে পারছি না। ছাত্ররা আজ গালি দেয় এমন পিতা আমরা দেখতে চায় না, যে পিতা নিজেই তার নিজের মর্যাদা রক্ষা করতে অপারগ।
কে শোনে কার কথা, কে দেখে কার মর্যাদা ,সভ্য মানুষ তথা প্রকৃত মানুষ তৈরির মহান কারিগর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মর্যাদা শুধু কবিতায় সীমাবদ্ধ তা কিন্তু নয়, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মর্যাদা জাতিসংঘের শিক্ষাবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও সনদেও স্বীকৃত। যারা শিক্ষকতার মহান পেশায় জড়িত বা শিক্ষাদান করেন তাদের জন্য জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও যৌথ উদ্যোগে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মর্যাদাবিষয়ক সনদ তৈরি করেছে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তরাষ্ট্রীয় সম্মেলনে ১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে এই মর্যাদাবিষয়ক সনদটি গৃহীত হয়। রাজা-মন্ত্রীর ছেলেরা গুরুগৃহে বিদ্যাচর্চা করতেন। গুরু অর্থাৎ সন্ন্যাসীরা বনের ভেতর কুটিরে জীবন-যাপন করতেন। ধর্মচর্চা করতেন। রাজা-মন্ত্রী তাদের ছেলেদের নিয়ে এসে করজোড়ে প্রার্থনা জানাতেন। অনুনয় করতেন গুরু যাতে তাদের সন্তানদের দায়িত্ব নেন। রাজপুত্র, মন্ত্রিপুত্ররা গুরুর কুটিরে থেকে গুরুর সেবা করে জ্ঞানার্জন করতেন। এখন সেই সত্য যুগও নেই, শিক্ষকের মর্যাদাও নেই। এই মর্যাদা হানির জন্য মূলত আমরা শিক্ষকরাই দায়ী কেনেনা আমরা ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এবং গোষ্ঠী স্বার্থ উদ্ধারের জন্য জীবন দিতেও রাজি আছি। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় দেখা যায় মানুষ অনর্থক নিজের অন্যায় স্বার্থকে সিদ্ধ করার জন্য সাধারণ শিক্ষকদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করে, তা গোপনে হোক বা প্রকাশ্যে হোক। যুগে যুগে, কালে কালে স্মরণীয়, নমস্য ব্যক্তিরা তাদের শিক্ষকদের প্রতি সবিনীত শ্রদ্ধাশীল থেকেছেন। ইমাম আযম আবু হানিফা (রাহ.) শিক্ষকের প্রতি তার শ্রদ্ধার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, আমার শিক্ষক ইমাম হাম্মাদ (রাহ.) যত দিন বেঁচেছিলেন, তত দিন আমি তার বাড়ির দিকে পা মেলে বসিনি। আমার মনে হতো, এতে যদি শিক্ষকের প্রতি আমার অসম্মান হয়ে যায়।কিন্তু আমাদের যারা গুরুজন তারা কি তাদের এই মর্যাদা জায়গাকে ধরে রাখতে পেরেছি, না বর্তমানে তার কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুও শিক্ষকদের সম্মানের চোখে দেখতেন। প্রসঙ্গক্রমে দুটো ঘটনা উল্লেখ করছি। চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের প্রথম চেয়ারম্যান প্রফেসর ইন্নাস আলী স্মৃতিচারণায় লিখেছেন ‘বঙ্গবন্ধু উপাচার্যদের প্রায়ই ডাকতেন। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের মতামত চাইতেন। বঙ্গবন্ধু আমাকে খুব সম্মান দেখাতেন। ওনার রুমে ঢুকলেই দাঁড়িয়ে যেতেন। অনেক সময় হয়তো মিটিং চলছে তখনও এ রকম দাঁড়িয়ে সম্মান করতেন।’ বঙ্গবন্ধু পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হওয়ার পর অধ্যাপক আবুল ফজল ‘শেখ মুজিবকে যেমন দেখেছি’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। শিক্ষা ও শিক্ষকের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অগাধ শ্রদ্ধার কথা বলতে গিয়ে অধ্যাপক আবুল ফজল লিখেছেন ’৬৯-এর নভেম্বর মাসে ইত্তেফাক পত্রিকায় ‘শক্ত কেন্দ্র কেন ও কার জন্য’ শিরোনামে প্রবন্ধ প্রকাশিত হলে বঙ্গবন্ধু অভিনন্দন জানিয়ে তাকে পত্র লিখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পত্রের জবাবে অধ্যাপক আবুল ফজল যে পত্র লিখেছিলেন তার উত্তরে বঙ্গবন্ধু লিখেছিলেন আপনার মতো জ্ঞানী, গুণী ও দেশপ্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে পারলে খুবই আনন্দিত হতাম। আবার যখন চট্টগ্রামে যাব, সাহিত্য নিকেতনে যেয়ে নিশ্চয়ই আপনার সঙ্গে দেখা করব। অধ্যাপক আবুল ফজলকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের আগে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ফোন করে বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক আবুল ফজলের অনুমতি নিয়েছিলেন বলে আবুল ফজল তার লেখায় উল্লেখ করেছেন।অথচ আজ আমি চোখে কি দেখছি , একজন উপাচার্য অথবা হবু উপাচার্য তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সিন্ডিকেট তৈরির মাধ্যমে অন্যান্য শিক্ষকদেরকে ধ্বংসের পায়তারা করছে, বাংলাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসল চিত্র এটিই দেখা যাচ্ছে। চায় তা কেউ সৎ সাহস নিয়ে বলুক অথবা না বলুক, ভয়ে আবার অনেকে চুপ থেকে যান, না জানি তার উপর আবার কোনও খরগ চালানো হয়! এই ধরুন সামনে আমার প্রমোশন বোর্ড,অথবা রিজেন্ট বোর্ড,আমার পদায়নের বিষয়াদি ইত্যাদি ইত্যাদি।বাহুবল দিয়ে অথবা ইজমের মাধ্যমে তা বন্ধ করতে হবে না হলে হয়তো বা যদি তিনি শিক্ষক হিসেবে সেনিওর হয়ে যান অথবা কোন একটা বড় পদে চলে যান তাহলে হয়তো আমাদের অথবা উনাদের ক্ষমতা কিছুটা খর্ব হতে পারে।এমন যদি হয় শিক্ষকদের ন্যায় নীতি ন্যায্যতা তবে সেই শিক্ষক আমি হতে চাই না।এ স্বার্থের কাছে শত্রু বন্ধ হয়ে যায় আবার বন্ধু শত্রুতে পরিণত হয়। হয়রে দুনিয়া ,আরো কতকিছু দেখতে হবে! ভবিষ্যৎ বংশধরদের যোগ্য-দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। আমি মনে করি , একটি দেশের জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগ হচ্ছে একটি লাভজনক বিনিয়োগ। শিক্ষায় বিনিয়োগ হলে শিক্ষিত ও চৌকস জনগোষ্ঠী তৈরি হবে। নতুন নতুন গবেষণার ফলে দেশ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অঙ্গন আলোকিত হবে। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষকদের অবস্থা তার উলটো। এ দেশের শিক্ষকরা সমাজে সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত ও বঞ্চিত। শিক্ষকতা পেশার কেন এ অবস্থা? দেশে অন্যান্য পেশার তুলনায় শিক্ষকতা পেশা মোটেও আকর্ষণীয় নয়।এর জন্য কারা দায়ী, আমাদের শিক্ষকদের গ্রুপিং। সার্বিক ভাবে আমরা আমাদের অধিকার কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ঐক্য অথবা সমর্থন করার জন্য তৈরি নয়। কেননা হয়তো কিছুটা ব্যক্তিস্বার্থ হারিয়ে যেতে পারে সে জন্য প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে দিতে প্রস্তুত। এ যেন এক মানসিক পারমাণবিক বোম।ছি ছি এমন পরিবেশ আবার দেখতে জেন না হয়!
হুদিন আগে পড়েছিলাম বইটির নাম মনে নাই তবে ঘটনার কিছু অংশ মনে আছে ।১৮৫০-এর দশকে বাঙালিদের মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশি বেতন পেতেন, বিদ্যাসাগর তাদের অন্যতম। তা সত্ত্বেও কেবল শিক্ষানীতিতে সরকারের সঙ্গে একমত হতে পারলেন না বলে, আদর্শের কারণে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। সাধারণ লোকেরা তখন নাকি তার সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘বিদ্যাসাগর চাকরি ছাড়লে খাবেন কী করে?’ তার উত্তরে বিদ্যাসাগর বলেছিলেন, তিনি আলু, পটোল বিক্রি করবেন, তা-ও ভালো। কিন্তু আপস নয়।অথচ অভিন্ন নীতিমালা অথবা নির্দেশিকা যাই বলি না কেন আমরা যারা শিক্ষক আছি আমাদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে গোপনে গোপনে সমর্থনও করছি।একটা সময় ছিল যখন অন্যের সন্তানকে মানুষ করার অদম্য প্রয়াস ছিল শিক্ষকের মাঝে। পেশা ছাড়া অন্য কোনো চিন্তা ছিল না। পেশাই ছিল ধ্যান-জ্ঞান আর নেশা। তাদের নীতি ও আদর্শ সব কিছুর ঊর্ধ্বে ছিল। বই-পুস্তকে সর্বদা ডুবে থাকতেন। জানার পরিধি বাড়ানোর এক অনমনীয় নেশায় ব্যস্ত থাকতেন। ছাত্রের মাঝে নিজের জ্ঞানটুকু ছড়িয়ে দিতে কত না আন্তরিক ছিলেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির বদনাম। প্রশ্নফাঁসের বদনাম। বই-পুস্তকের সঙ্গে অনেক শিক্ষকের কোনো সখ্যই নেই। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যেটুকু পড়ে এসেছেন, তা দিয়েই শিক্ষকতা চালিয়ে নিতে চান। খুব কম শিক্ষক পাওয়া যায় যারা বই পুস্তকে লেগে থাকেন। কিন্তু রাজনীতিতে মোটামুটি সবাই সফল হতে চান কেননা এই জায়গায় অর্থ ইনকামের অথবা টাকা-পয়সা রোজগারের হয়তো একটা বিশেষ সুবিধাও পাওয়া যেতে পারে।অনেকে অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে সেটাও মাথায় রাখা উচিত।কোনো এক জায়গায় একটি শ্লোক পড়েছিলাম,শ্লোকে ছিল, ‘শিক্ষককে কখনো অবহেলা করা উচিত নয়। সৃষ্টি ও ধ্বংসের দুয়েরই বীজ লুকিয়ে রয়েছে শিক্ষকের মধ্যে।’ জাতিকে ভাবতে হবে যে, জাতির মেরুদণ্ডের চালিকাশক্তিকে বঞ্চিত করে, সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করে, সমাজ-রাষ্ট্রে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা যায় না।
বর্তমানে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের দলভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে সমালোচনা দীর্ঘদিনের। বলা হচ্ছে, শিক্ষাঙ্গনগুলোতে ক্ষমতাসীন শিক্ষক সংগঠনের যে আধিপত্যের রাজনীতি, শিক্ষক প্রশাসন সেখানে এর বিপরীতে অবস্থান না নিয়ে বরং অনেকক্ষেত্রেই সহযোগীর ভূমিকা নিয়ে থাকে।ভিসিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পেতে কিংবা পদ ঠিক রাখতে শিক্ষকরা আরো বেশি করে রাজনীতিতে জড়াচ্ছেন।কিন্তু শিক্ষকদের এভাবে কোন একটি সংগঠনের অনুসারী হয়ে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়নে কতটা ভূমিকা রাখছে?ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ৩টি দল আছে। সাদা, নীল এবং গোলাপী। এই তিনটি দলই তিন ধরণের রাজনীতির প্রতি অনুগত। আমাদের এখানে অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দৃশ্যমান দুটি সংগঠন রয়েছে। যদিও রঙ্গের কোনো বিন্যাস এখানে নেই তারপরও কেমন যেন কালো রং মাঝে মাঝে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। আর শিক্ষক প্রশাসনও নিয়ন্ত্রণে থাকে কোন একটি নির্দিষ্টগোষ্ঠী অথবা সংগঠনের অনুগত শিক্ষকদের হাতে। বলা হয়ে থাকে কোন একটি সংগঠনের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই ভিসি, প্রো-ভিসি, প্রক্টরসহ সকল প্রশাসনিক পদ এক ধরণের ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যায় ক্ষমতাসীন সংগঠনের অনুসারী শিক্ষকদের মধ্যে। এমনকি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতেও অনেক ক্ষেত্রে দলীয় পরিচয়ই মুখ্য হয়ে ওঠে। আমার মতে , এখন গোষ্ঠীভিত্তিক যে শিক্ষক রাজনীতি সেখানে আদর্শই মুখ্য নয়, বরং লোভের সংস্কৃতিটাই মুখ্য। ‘৮০’র দশকেও শিক্ষকদের মধ্যে আদর্শিক ভিন্নতা এবং ব্যবধান ছিলো। কিন্তু সেই রাজনীতি তখন এত ইজমভিত্তিক রাজনীতি ছিলো না। সেটা ছিলো সব শিক্ষকদের এবং সর্বোপরি শিক্ষার কল্যাণে।’ শিক্ষকদের মৌলিক কাজ দুটি। পড়ানো এবং গবেষণা। এখন পড়াতে হলে তো আগে পড়তে হবে। শিক্ষকরা যদি অধ্যয়নের সময়টুকু রাজনীতির পেছনে ব্যয় করেন, কারও সাথে সখ্যতা রাখলে বিভিন্ন পদে পদায়িত হবেন , কোথায় গেলে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে পারবেন সেসবের জন্য তদবিরে ব্যস্ত থাকেন তখন স্বভাবত:ই প্রশ্ন আসে যে, তিনি পড়বেন কখন আর গবেষণাই বা করবেন কখন?’
তবে শুধু যে শিক্ষা এবং শিক্ষকের মানের কারণেই শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে তা নয়।বরং সাম্প্রতিককালে দুর্নীতি, অনিয়মসহ নানা কারণেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রশাসন বিতর্কের মুখে পড়েছে।আমি মনে করি, গোষ্ঠীভিত্তিক বিবেচনা বাদ দিয়ে শিক্ষকদের যেভাবে ন্যায়ের কথা বলা দরকার ছিলো সেটা নেই।’আমাদের এখানে নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে সেগুলো যদি শিক্ষকরা সংঘবদ্ধভাবে দেখিয়ে দেন, প্রতিহত করেন, শিক্ষানীতি নিয়ে যে নয়ছয় হচ্ছে, চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে তার তো কোন প্রতিবাদ দেখি না? সেখানে শিক্ষকদের ভূমিকা রাখার আছে। কোন কোন শিক্ষক হয়তো দলীয় কর্মীর মতো আচরণ করছেন, এরকম শিক্ষকদের কারণেই সবার উপর দোষ আসছে। আর সে ব্যক্তি আমিও হতে পারি মাঝে মাঝে নিজেকে নিজে ভুলে যায়। কেননা যেখানে দেখি আমাদের সবার স্বার্থ জলাঞ্জলি হতে যাচ্ছে সেখানে ভুল ভাবে নিজেকে ভুলে যাওয়া হয়তো যৌতিক। অনেকের মতে নাও হতে। যদি কখনো এমনটি হয়ে থাকে তবে সবার নিকট ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এবং দোয়া চাই যেন শিক্ষকের মতো শিক্ষক হতে পারি।আসুন এ সমস্ত বিষয় থেকে আমরা সবাই বের হয়ে শিক্ষক সত্তার জন্য মিলেমিশে একসঙ্গে কাজ করি অন্যায়কে প্রতিহত করি নিজেদের স্বার্থ, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ এবং সর্বোপরি জাতীয় উন্নয়নের জন্য যা করার সেই দিকে মনোযোগী হয়।
লেখক:সহযোগী অধ্যাপক,ফার্মেসি বিভাগ,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ