বৃহত্তম দলের মনোনয়ন কৌশল মূল প্রার্থী, ডামী প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী। মূল প্রার্থীর চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণের উপায়!
-কাজী হারুন অর রশীদ মিরন
সফটওয়্যার প্রোগ্রামার এনালিস্ট, সাবেক আইটি কনসালট্যান্ট, যুক্তরাষ্ট্র
****
আমার ভোট আমি দেবো যাকে খুশি তাকে দেবো এটাই অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচনের মূল কথা, গনতন্ত্রেও একই কথা। ভোটারদের বিরাট অংশ সাধারণত কোনো দল করেন না। এই আম জনতা চায় নির্বাচনী বিধিমালা মেনে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার। এবং তাহলে যারা নির্বাচিত হন তারা সত্যিকারের জনপ্রতিনিধি হন।
এই বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে নির্বাচনী গনতন্ত্র বিভিন্ন সময়ে হোঁচট খেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের নির্বাচনী পদ্ধতি এদেশে চালু যদি হতো তাহলে মানুষ সর্বোত্তম গণতান্ত্রিক চর্চা করার সুযোগ পেতো কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য তা হয়নি।
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত দল বিএনপি সহ তাদের পথ হারানো জোট নির্বাচনে আসেনি সেজন্য তো দেশের সাংবিধানিক ধারা বন্ধ হতে পারে না।
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত এমনকি জাতিসংঘ চায় জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে সহিংসমূক্ত নির্বাচন , না হলে ভিসানীতি সহ বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞার হুমকি আছে।
জাতির পিতার কন্যা দূরদৃষ্টি সম্পন্ন বিচক্ষন, দক্ষ রাষ্ট্র নায়ক, আওয়ামীলীগের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা বাঙালির চিরায়ত ভোটারদের উৎসব মুখর উপস্থিতির জন্য এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত দিলেন নিজ দলের মধ্যেই নৌকার বাইরে ডামি প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থীর অনুমোদনে। ফলাফল দুই শতাধিক আসনের অধিক আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত হেভিওয়েট প্রার্থী দলীয় এমপি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান,বিভিন্ন পদধারী নেতা, কর্মীরা যার যার স্বপ্ন বাস্তবায়নে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন । নির্বাচনের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে । এই ভাবে নির্বাচন নিবন্ধিত অন্যান্য ২৭ টি( ৪৪ এর মধ্যে যা ২০১৪ তে ছিল মাত্র ১২) নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। এখন বাকী আছে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের চ্যালেঞ্জ।
এই পদ্ধতি বাকশালের ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্রের নব সংস্করণ ধরা হলে তা ফেলবে দলীয় মনোনীত প্রার্থী বিশেষ করে বারবার নির্বাচিত এমপিদের কপালে বিরাট ভাঁজ। কেননা এক বিশেষ করে একাধিকবার নির্বাচিত এমপি
১। জনবান্ধব থাকলেও নানা কারনেই সবার মন জয় করা সম্ভব হয় না।
২। অনেক সময় ভুল নীতির কারণে অথবা নিজের আধিপত্য সুসংহত করতে যেয়ে অনেক ক্ষেত্রেই তৈলবাজ, মোসাহেবী দ্বারা পরিবেষ্টিত থেকে জনবিচ্ছিন্ন হতে থাকে।
৪। মোসাহেবী তৈলবাজদের প্রাধান্য দিতে পরীক্ষিত কর্মীরা দূরে সরে যেতে পারে বা নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে।
৫। সুসম উন্নয়ন না হবার ফলে এলাকা ভিত্তিক চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
৬। দলের সাংগঠনিক কাঠামোর চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে সন্তানদের অতিরিক্ত বা নিয়মিত অংশগ্রহণে একটি বড় চামচা গ্রুপ বেষ্টন হলে জনবিচ্ছিন্ন হবার সম্ভাবনা প্রবল থাকে ( উদাহরণ বড় পরিসরে কংগ্রেস/ইন্দিরা গান্ধীর পরাজয় ও সঞ্জয় গান্ধী বা হালের বিএনপি/ খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান )
** উত্তরণের উপায়**
১। শক্তিশালী সংগঠন থাকলে ভুল ভ্রান্তির কারণগুলো চিহ্নিত করে আবেগ বিবর্জিত বস্তুনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
২। অভিমানী ত্যাগী নেতাকর্মীদের পূনঃমূল্যায়ন করে নির্বাচনী কর্মকান্ডে যুক্ত করানো।
৩। যারা দলের নিকট মনোনয়ন চেয়েছিলেন তাদেরকে অহেতুক খাটো করে না দেখা। সম্ভব হলে নির্বাচনী কর্মকান্ডে তাদেরকেও যতটা পারাযায় যুক্ত করা।
৪। অতীতের জানা অজানা ভুলের জন্য জনগণের নিকট দুঃখ প্রকাশ করা। কেননা নেতাতো মানুষ ফেরেশতা নন, ভুল করা বা হওয়া খুবই স্বাভাবিক।
৫। কোনো মনোনয়ন প্রার্থী বা প্রতিদ্বন্দিকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য বা অসম্মান করার মানসিকতা বুমেরাং হতে পারে কেননা সকল ক্ষমতার উৎস উপরে মহান সৃষ্টিকর্তা আর ভোট কেন্দ্রে ভোটাররা।