মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদ
উপকূলীয় অঞ্চলের সর্বদক্ষিনের উপজেলা স্বরূপকাঠীতে রিমেলের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত সকল ব্যবসায়ীক খাত।আঘাতের ১০ দিন পরেও ঘা একদম দগদগে।যা এখন পচন ধরার অপেক্ষায়।স্বাভাবিকের চেয়ে ৫/৬ ফুট পানি প্রবাহিত হওয়ায় মাত্র ২% বসত ঘর যা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেলেও বাকি ৯৮% কাচা ও পাকা ঘরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।জীবন বাচাতে আপনজন নিয়ে কেহ ছুটেছে পার্শের দালান করা স্কুল কলেজে।আবার কেহ আশ্রয় নিয়েছে উচু মসজিদ বা মন্দিরের বারান্দায়।নিজেদের প্রান বিপন্ন করে চেস্টা করেছে গবাদি পশু ও পোল্ট্রী মূরগীর জীবন বাচাতে।শত চেষ্টা ব্যর্থ প্রমানীত হয়েছে স্মরনকালের ভয়াবহ এ বন্যার কাছে।
এর নমুনা সরকারি হিসাবেই পাওয়া যায়। চলুন স্বরূপকাঠী প্রানী সম্পদ অফিসারের সাথে বলা কথা পড়ে আসি।তাপস কুমার ঘোষ জানান রিমেলে এ উপজেলায় প্রায় ৮০ হাজার ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগী মারা যায়। যার আনুমানিক মুল্য নিরুপন করা হয় ৬ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা।যদিও ফার্ম মালিকরা সরকারের এ হিসাবের সাথে একমত নন।তারা দাবী করেন শুধু লেয়ার মুরগীই ৮০ হাজারের উপরে মারা যায়।আর প্রতিটি মুরগী ডিম পাড়া পর্যন্ত ৮০০ টাকা খরচ হয়।সরকারের এ হিসাবে ব্রয়লার মুরগী ধরা হয়নি বলে তারা দাবী করেন।ব্রয়লার মুরগী চাষী দৈহারী ইউপির নরেন বলেন সরকার এ হিসাব কিভাবে করেছেন তা তারাই জানেন।কারন ব্রয়লার মুরগী বাজারজাতকরন পর্যন্ত ৮০০ টাকা খরচ হয়না।এ থেকেই বোঝা যায় তারা ব্রয়লার মুরগীর হিসাব এখানে আনেননি।তিনি আরো জানান অনেক খামারীর প্রচুর ডিম নষ্ট হয়ে গেছে পানিতে ভিজে।স্বরূপকাঠিতে বেসরকারি হিসেবে ছোটো বড় মিলিয়ে ২হাজার মুরগীর খামার রয়েছে বলেও তিনি দাবী করেন।
এদিকে আরেক খামারী নান্দুহার গ্রামের আঃ রহিম বিশ্বাস বলেন, এ এলাকায় পুকুরের উপরে মুরগীর ফার্ম করে আসছে ব্যবসায়ীরা।প্রতি ১ হাজার মুরগীর ফার্মের নিচের পুকুরে তারা তিন হাজার পিচ পাঙ্গাস মাছ চাষ করতে পারেন বলে তিনি দাবী করেন।তিনি আরও জানান রিমেলে তার মুরগীর ক্ষতি না হলেও প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার মাছ বের হয়েছে পানির তোড়ে।তিনি বলেন আমার মতো অনেক খামারী রয়েছে যাদের ১ কোটি ২ কোটি টাকারও মাছ বের হয়ে গেছে পানিতে। এদিকে ভাসমান সবজি চারাও রক্ষা পায়নি এ বন্যা থেকে।পানির সাথে প্রচুর বাতাস হওয়ায় সবজি চারার আইল বা দলা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।গগন এলাকার একাধিক ধাপচাষী বলেন কি করে যে এবার সংসার চালাবো তা আল্লাহই ভালো জানেন।ধাপের সাথে সাথে ক্ষতির মুখে পরেছে বাংলার আপেল খ্যাত আটঘর কুড়িয়ানা ইউপির পেয়ারা।সেই সাথে ক্ষতি হয়েছে আমড়ার। প্রচন্ড বাতাসে মুকুলেই ঝড়ে গেছে অনেক পেয়ারা ও আমড়া।পানের বরজ থেকে শুরু করে সবজি চাষী, কলা চাষী এমন কি রক্ষা পায়নি ফল ও ফুলের চারা উৎপাদনকারী কয়েকশ নার্সারী। এ খাতের ক্ষতির ব্যাপারে কৃষী কর্মকর্তা চপল কৃষ্ণ নাথ বলেন আমাদের প্রাথমিক তদন্তে ১০ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে এ খাতে। কথা হয় মৎস অফিসার ফারিয়া কনকের সাথে।তিনি জানান ১৭০০ পুকুর এবং ৪৫০ টি ঘের ভেসে গিয়ে ৭৫০মেট্রিক টন মাছের ক্ষতি হয়েছে রিমেলে। যার আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছে ১৪.৫কোটি। তবে এ হিসাব নিয়ে প্রবল আপত্তি রয়েছে চাষীদের।ফার্ম ব্যবসায়ী এবং মৎস চাষী সুটিয়াকাঠির শামিম বলেন আমার ফার্মের নিচের প্রায় ১০লক্ষ টাকার পাঙ্গাস মাছ পানিতে ভেসে গেছে।তিনি বলেন সরকারি হিসেবে স্বরূপকাঠিতে ২১৫০টি ঘের ও পুকুর রয়েছে।প্রতি পুকুর ও ঘেরে গড়ে ১লক্ষ টাকার মাছ হিসাব করলেও অর্থ মুল্য সরকারের হিসাবের প্রায় দ্বিগুণ হয়।তবে এ ক্ষতি দ্বিগুণেরও কয়েকগুণ বেশি। এদিকে কথা হয় কাঠ মিস্ত্রি সুনিলের সাথে।সুনিল বলেন আমার কাছে ঘর পুনঃনির্মানের জন্য যারা আসেন তাদের বেশিরভাগকেই আমি ফিরিয়ে দিচ্ছি।কারন বন্যার পর থেকে আগামী ২০ দিনে আমার হাতে কাজ করার জন্য কোনো সময় নেই। তিনি বলেন স্বরূপকাঠিতে ২ শতাধিক কাঠ মিস্ত্রির প্রত্যেকেরই এক অবস্থা। তিনি জানান সারে তিন লক্ষাধিক জনবসতির স্বরূপকাঠী উপজেলা রিমেলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এমন লোক খুজে পাওয়া যাবেনা। এদিকে সুটিয়াকাঠি ইউপির সচিব মৃনাল কান্তি ঘোষ জানান বন্যার পর থেকে সরকারিভাবে ৫০০ কেজি চাল পেয়েছি।তা ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বন্ঠন করেছি।উপজেলা সংশ্লিস্ট অফিস জানান ১০ ইউপির জন্য বন্যার পরে ৫ মেট্রিকটন চাল বরাদ্ধ হয়েছে সরকারিভাবে।যা প্রতি ইউপিতে ৫০০ কেজি করে দেয়া হয়েছে।নিম্নআয়ের লক্ষাধিক মানুষের জন্য সরকারি সাহায্য একেবারেই যেমন সামান্য তেমনি এগিয়ে আসেননি বিত্তবান কোনো লোকজন,বলে হতাশা প্রকাশ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমুদয়কাঠী ইউপির এক আওয়ামীলীগ নেতা।
তিনি বলেন মাত্র কয়েকদিন পূর্বে শেষ হওয়া উপজেলা নির্বাচনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরও দেখিনি বন্যার পরে কোনো সাহায্য নিয়ে আসতে।ওই আওয়ামীলীগ নেতার কথার সত্যতা পাওয়া যায় সুটিয়াকাঠী ইউপির ৭ নং ওয়ার্ডের মোঃ শাম মিয়ার স্ত্রী খালেদার ও মৃত ফারুক হোসেনের স্ত্রীর কথায়।খালেদা এ প্রতিনিধিকে জানান বার বার চেয়ারম্যান মেম্বরদের কাছে গিয়েছি বন্যার পরে।কেহ কোনো সাহায্য করেনি।আজ (পড়তে হবে সোমবার) সংসদ সদস্যের ব্যাক্তিগত অনুদান হিসাবে দেয়া ত্রান পাওয়ার জন্য গিয়েছিলাম পরিষদে।কিন্ত কার্ড না থাকায় কেহ ত্রান দেয়নি।সকাল থেকে সারাদিন বসে ছিলাম।
এখন খালি হাতে যাচ্ছি।বন্যার পরে সন্তানদের নিয়ে না খেয়ে বা আধা পেট খেয়ে দিন কাটাচ্ছি।২৬ ও ২৭ মে দুইদিনের এ বন্যা পরবর্তী দুরাবস্তা থেকে সাধারন মানুষের পার্শে দাড়ানোর জন্য সংশ্লিস্ট মহল দ্রুত এগিয়ে আসুক এমন প্রত্যাশা করছে আব্দুর রহমান ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ দেলোয়ার হোসেন তালুকদার।তিনি আরও যোগ করেন সন্ধ্যা নদীর তীরবর্তী শতাধিক বসতি ঘর যা রিমেলে প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।এবং কিছু বসতি নদীর গর্ভে বিলিন হয়েছে।এসকল খাতে পুনর্বাসনের জন্য শুধুমাত্র স্বরূপকাঠী উপজেলায় ৫ শতাধিক কোটি টাকা সরকারি অর্থ অনুদান হিসেবে বরাদ্ধ প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।