কাবা কাকলি, কবি নজরুল কলেজ প্রতিনিধি
প্রতিদিন রাস্তাঘাটে চোখে পড়ে এমন কিছু শিশু, যাদের ঠিকানা বলতে কিছু নেই। ফুটপাতে, রেলস্টেশনে, বাস টার্মিনালে কিংবা বাজারের পাশে তাদের জীবন কাটে। পথশিশুরা অধিকাংশই অনাথ বা পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে রাস্তায় এসে আশ্রয় নেয়। কেউ কেউ পরিবার ছেড়ে পালিয়ে আসে, আবার কেউ বাবা-মার সঙ্গে থেকেও কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
বাংলাদেশে পথশিশুদের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন। তবে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, এ সংখ্যা লাখেরও বেশি। ঢাকার মতিঝিল, সদরঘাট, গুলিস্তান, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকায় এদের বসবাস সবচেয়ে বেশি। এদের অধিকাংশই শিশুশ্রমিক হিসেবে কাজ করে। কেউ ভিক্ষাবৃত্তি করে, কেউ আবার পলিথিন, প্লাস্টিক কিংবা বর্জ্য সংগ্রহ করে।
পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়াপার্কে দিনের বেলায় অনেক মানুষের ভিড় জমলেও সন্ধ্যা নামতেই এ পার্কে আশ্রয় নেয় একদল পথশিশু। এদের মধ্যে আফিয়া (৯)ও তানজিলা (১১) নামের দুই পথশিশুর সাথে কথা হয়।
আফিয়া জানায় তারা দুবোন মায়ের সাথে থাকে।বাবা না থাকায় মায়েই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। তবে তার মা ভিক্ষাবৃত্তিতে যুক্ত। এছাড়াও তারা দুবোন পার্কে ও সদরঘাট এলাকায় ঘুরে টাকা সংগ্রহ করে।
অন্যদিকে তানজিলা বলে তার মা ও সে দুজনেই পার্কে থাকে। তার মা ভিক্ষা করে আর সে ফুল এর মালা বিক্রি করে। দিনশেষে রাত কাটানোর জন্য তারা আশ্রয় নেন পার্কে। কিন্তু এখানেও তাদের শান্তিতে থাকতে দেয়া হয় না। তানজিলার অভিযোগ করে ভ্যানের দোকানদাররা প্রায়শই তাদের পার্ক থেকে বের করে দেয় এমনি হাটতে আসা অনেকেই ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের উঠিয়ে দেয়।
তানজিলা আরও জানায় পার্কে আরও কিছু শিশু আছে যারা ভেন্ডি নামক নেশাদ্রব্য সেবন করে। দিনের বেলা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায় এবং রাত হলে পার্কে আসে।
পথশিশুরা সবসময় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। খাদ্য, বাসস্থান ও চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদাগুলো থেকেও তারা বঞ্চিত। এদের মধ্যে অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, যা তাদের ভবিষ্যতকে আরও অন্ধকারময় করে তোলে।
সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা পথশিশুদের পুনর্বাসনের জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। পথশিশুদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কাউন্সেলিং সেন্টার বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি, তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করতে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।